Footer Logo

২০২১/০৬/০২

Telenapota Abiskar (Telenapota Abishkar) by Premendra Mitra

  BAIRAGYA SHIKSHA NIKETAN       ২০২১/০৬/০২

তেলেনাপোতা আবিষ্কার

প্রেমেন্দ্র মিত্র


একাদশ শ্রেণি বাংলা গল্প তেলেনাপোতা আবিষ্কার প্রেমেন্দ্র মিত্র। প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বিষয়বস্তু, নামকরণ, অন্তর্নিহিত তাৎপর্য, উৎস এবং প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।

Telenapota Abiskar (Telenapota Abishkar) by Premendra Mitra



Telenapota Abiskar by Premendra Mitra

Telenapota Abiskar (Abishkar) by Premendra Mitra


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) গল্পের বৈশিষ্ট্য


বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পকার কবি ঔপন্যাসিক প্রেমেন্দ্র মিত্র (Premendra Mitra)। 1920-30 এর দশক থেকে বাংলার সমাজ ও ব্যক্তিমানুষের যে অবক্ষয় শুরু হয়েছিল সেই হতাশা ও নেতিবাচক মনোভাব প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্পের এবং কবিতার প্রধান সুর। আবার এই ভয়ঙ্কর কুৎসিত বিকৃত লালসাময় জীবনকে সত্য বলে মেনে নিয়েও প্রেমেন্দ্র মিত্র চেয়েছেন এক সুন্দর জগত সৃষ্টি করতে।


তাই প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) গল্পে স্ববিরোধ লক্ষ্য করা যায়। "আমি কবি যত কামারের, যত কাঁসারির আর ছুতোরের"- বলে আত্ম ঘোষণা নিয়ে এসেছিলেন যিনি বাংলা সাহিত্যে সেই প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্পে দরিদ্র শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন যন্ত্রণা প্রকাশ পেয়েছে। আধুনিক ভয়ঙ্কর সভ্যতার চাপে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর জীবনের সংকট তাঁর গল্পের প্রধান অবলম্বন। 


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) গল্প তেলেনাপোতা আবিষ্কার-এর উৎস


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার (Telenapota Abiskar) গল্পটি শারদীয় যুগান্তর পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল 1942 খ্রিস্টাব্দে। এরপরে "তেলেনাপোতা আবিষ্কার" গল্পটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা "কুড়িয়ে ছড়িয়ে" নামে গল্পগ্রন্থে সংকলিত হয়েছিল 1946 খ্রিস্টাব্দে। এছাড়া "প্রেমেন্দ্র মিত্রের  শ্রেষ্ঠ গল্প" গ্রন্থ এবং "জলপায়রা" নামে গল্পগ্রন্থে পরবর্তীকালে সংকলিত হয়েছিল। 


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বিষয়বস্তু


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার (Telenapota Abiskar) গল্পটি যেন একটি লিরিক কবিতা যার কাহিনী অংশ খুব কম। মহানগরীর কোলাহল থেকে দূরে নামহীন একটি গ্রাম তেলেনাপোতা যেখানে কর্মজীবন বৈচিত্রহীন, চারিদিকে প্রায় অন্ধকার ছায়াচ্ছন্ন পরিবেশ, প্রাচীনকালের দু-একটা ভাঙা বাড়ি, মশাদের ঐক্যতান, জলে জঙ্গলে স্যাতসেতে কাদা, একটি ম্যালেরিয়া গ্রস্ত গ্রাম তেলেনাপোতা। দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে নাগরিক মানুষ এই গ্রামে এসেছে মাছ ধরতে।


গভীর রাতে জঙ্গল পার হয়ে তাদের গরুর গাড়িটি একটি ভাঙ্গা অট্টালিকার সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটা ঘর কোনোরকমে বাসযোগ্য করে তারা রাত্রি বাস করে। এক বন্ধু মদের নেশায় ও একজন ঘুমে আচ্ছন্ন। ঘুম আসছে না দেখে নায়ক নড়বড়ে ভাঙ্গা সিঁড়ি বেয়ে ছাদে হাজির হয়। আকাশে তখন কৃষ্ণপক্ষের ক্ষীণ চাঁদ। তার ধোঁয়াটে আলোয় জনহীন তেলেনাপোতা গ্রামটি সহসা মায়াপুরী হয়ে ওঠে। দূর বাতায়ন পথে একটি ক্ষীণ আলোকরেখা ও তার অন্তরালে একটি নারীমূর্তির ছায়া সরে যায়। 


পরদিন সকালে রাতের দেখা এই মায়াপুরী হারিয়ে যায়। দিনের আলোয় ভগ্ন রূপ নিয়ে হাজির হয় গ্রামটি। পুকুরের পাড়ে বসে মাছ ধরার ব্যর্থ চেষ্টায় ক্লান্ত নায়ক হঠাৎ জলের শব্দে তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে পিতলের কলসিতে জল ভরে চলে যাচ্ছে। যেতে যেতে মেয়েটি তাকে বড়শিতে টান দেবার কথা বলে যায়। পরে জানা যায় এই অবিবাহিত গ্রাম্য যুবতী বহুদিন পূর্বে নিরঞ্জন নামে এক শহুরে যুবকের বিবাহের প্রতিশ্রুতিতে বঞ্চিত হয়েছে। নিরঞ্জন ফিরে আসেনি। একথা শুনে গল্পের নায়ক যখন তার সমধর্মী কোন শহুরে যুবকের বঞ্চনায় বিচলিত হয়ে ওঠে, তখন সে কথা দেয়-"আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথার নড়চড় হবে না।" সে মেয়েটিকে বিয়ে করবে। 


কিন্তু প্রবাদ আছে, মানুষ ভাবে এক আর ঘটে অন্য আর এক। শহরে ফিরে নানা কাজের ঝামেলায় এবং রোগাক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ দিন কেটে যায়। আর যতদিন যায় আবেগ তত কমে আসে। অস্ত যাওয়া তারার মতো তেলেনাপোতার স্বপ্ন ঝাপসা হয় এবং "একবার ক্ষণিকের জন্য আবিষ্কৃত হয়ে তেলেনাপোতা আবার চিরন্তন রাত্রির অতল তলায় নিমগ্ন হয়ে যায়"।


কী এক আশ্চর্য পরিসমাপ্তিতে প্রেমেন্দ্র মিত্র মধ্যবিত্তের নির্বিকার নির্মমতাকে ব্যক্ত করেছেন। যে সর্বাঙ্গীণ অবক্ষয় এবং মূল্যবোধের বিনষ্টি গ্রাস করেছিল সমাজকে সেখানে প্রেমের কোন মূল্য নেই। নির্মম বাস্তবতা এবং নিষ্ঠুর দারিদ্র্য মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবন থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। এক চূড়ান্ত হতাশা নৈরাশ্য গল্পটির পরিণতিকে বেদনার্ত করেছে। মধ্যবিত্তের জীবন যন্ত্রণা ও অস্তিত্বের সংকটকে রূপায়িত করেছেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। 


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের গঠনশৈলী


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার (Telenapota Abiskar) গল্পটি গল্পহীনতার নিদর্শনরূপে গঠিত হয়েছে। খুব আকস্মিকভাবে যেন প্রথম পঙক্তিটি লেখা হয়েছে, " শনি ও মঙ্গলের- মঙ্গলই হবে বোধহয়, যোগাযোগ হলে তেলেনাপোতা আপনারাও একদিন আবিষ্কার করতে পারেন।"। তেলেনাপোতা আবিষ্কার যেন সাধারণ একটা ব্যাপার। যেদিন মানুষ একটু সময় করে নিতে পারবে সেদিনই তেলেনাপোতা আবিষ্কার হবে। গল্প বলার এই ক্যাজুয়াল ভঙ্গিটি মনে করিয়ে দেয়, সতর্ক করে দেয় যে, মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে এই তেলেনাপোতা কখনোই আবিষ্কার হবে না।


এই ভ্রষ্ট নাগরিকতা, মিথ্যাচারী নাগরিক জীবন এমনি করেই বারবার গ্রামে যাবে, নায়িকাকে উদ্ধারের আশ্বাস দেবে, যৌবন স্বপ্নকে নিয়ে আবেগ কাতর হবে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তারপর আর তার এগিয়ে যাওয়া হবে না। নাগরিক জীবনের করাল গ্রাস তার স্বপ্নকে আবেগকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবে। মধ্যবিত্ত মানুষ পুটি মাছ ধরার যোগ্যতা নিয়ে প্রেম ভালোবাসা নামক বড় মাছ ধরার আশায় বারবার ছিপ ফেলবে। কিন্তু সময় তাকে টেনে নিয়ে যাবে প্রয়োজন বাধা হয়ে দাঁড়াবে। 


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের 'আবিষ্কার' শব্দের তাৎপর্য


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) তেলেনাপোতা আবিষ্কার (Telenapota Abiskar) গল্পের প্রথম পরিচ্ছেদে 'আবিষ্কার' শব্দটি ব্যবহার করে মধ্যবিত্তের সাধ ও সাধ্যের ফারাকটাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের নায়ক যে চেতনাহীন নয়, সে নায়িকা যামিনী ও তার মায়ের বেদনায় যেমন ফিরে আসার শপথ করেছে, তেমনি কলকাতায় ফিরে এসে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারার কারণে নিজের বিবেকবোধের যন্ত্রণায় নিজেকে প্রবঞ্চক রূপে চিনতে পেরেছে।


তাই বারবার এই গণ্ডি কেটে পরম সত্যকে জানা ও পাবার আকাঙ্ক্ষায় নায়ক বারে বারে যাবে তার কল্পনার তেলেনাপোতায়। কখনো মনে হবে ঘটনাটা হয়তো অবাস্তব। এই জনহীন ঘুমের দেশে এরকম মেয়ে কোথায় আছে তা নায়ক বিশ্বাস করতে পারবে না। তবু মানুষের কণ্ঠে বারবার ধ্বনিত হবে ফিরে আসবো, ফিরে আসবো। তেলেনাপোতা আবিষ্কার এর সূত্রে যেন নিজেকে আবিষ্কার এবং মনুষ্যত্বে ফিরে যাবার ডাক দিয়েছেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। সেই অর্থে গল্পটি হয়েছে সার্থক। 


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের নামকরণ সার্থকতা


প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার (Telenapota Abiskar) গল্পে তেলেনাপোতা গ্রামকে ঘিরে এই গল্পের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। আসলেই তেলেনাপোতা গ্রামটির আবিষ্কার করা হয় না। জীবনের চাওয়া এবং পাওয়া এই দুইয়ের মধ্যে অসঙ্গতি এই গল্পে দেখানো হয়েছে। তেলেনাপোতা নামে একটি কাল্পনিক গ্রাম আবিষ্কার করে প্রেমেন্দ্র মিত্র সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনা দিতে চেয়েছেন। এই গল্প পাঠ করে যে কোন পুরুষ পাঠক যেন নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে। তাই প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের নামকরণ ব্যঞ্জনাধর্মী। 


প্রেমেন্দ্র মিত্রের (Premendra Mitra) লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের প্রশ্ন উত্তর (Telenapota Abiskar Question Answer)


প্রশ্ন 1. তেলেনাপোতা আবিষ্কার (Telenapota Abiskar) গল্পের নিরঞ্জন যামিনীর মাকে কি বলেছিল? 

নিরঞ্জন যামিনীর মাকে বলেছিল বিদেশ থেকে চাকরি করে ফিরে এসে সে যামিনীকে বিয়ে করবে। 


প্রশ্ন 2. তেলেনাপোতা আবিষ্কার (Telenapota Abiskar) গল্পে গরুর গাড়িতে কী সমস্যা হয়েছিল? 

কোথায় যাওয়ার সময় গরুর গাড়িতে তিন বন্ধুর স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। 


প্রশ্ন 3. তেলেনাপোতা আবিষ্কার (Telenapota Abiskar) গল্পের কথক ইতিপূর্বে কোন মাছ ধরেছিলেন? 

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের কথক ইতিপূর্বে পুঁটি মাছ ধরেছিলেন। 


logoblog

Thanks for reading Telenapota Abiskar (Telenapota Abishkar) by Premendra Mitra

Previous
« Prev Post

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam links in the comment box.