Footer Logo

২০২১/০৫/২৬

Tragedy of Nil Darpan by Dinabandhu Mitra

  BAIRAGYA SHIKSHA NIKETAN       ২০২১/০৫/২৬

নীলদর্পণ Nildurpan or The Indigo Planting Mirror বাংলা সাহিত্য আলোচনা ।  নীলদর্পণ । দীনবন্ধু মিত্র


Tragedy of Nil Darpan by Dinabandhu Mitra
Tragedy of Nil Darpan by Dinabandhu Mitra


প্রশ্ন: 'নীলদর্পণ' নাটকের ট্রাজেডি বিচার করো। (Tragedy of Nil Darpan by Dinabandhu Mitra)

শোকের উচ্ছ্বাসমূলক রচনামাত্র ট্রাজেডি হতে পারে না। আবার, যে নাটকে বেদনাকে প্রধান করা হয়, কিন্তু সেই বেদনার কোন প্রাক সূত্র জ্ঞাপন করা হয় না তাও ট্রাজেডি হিসেবে গণ্য নয়। বাংলা সাহিত্যের প্রথম যুগে শেক্সপিয়রের নাটক থেকে অনুসরণ করে কয়েকটি এই শ্রেণীর নাটক লেখার চেষ্টা হয়েছিল। 

‘নীলদর্পণ’ রচনার একবছর পর মধুসূদন প্রথম গ্রিক ট্রাজেডি অনুসরণে সার্থক ট্রাজেডি নাটক রচনা করেন ‘কৃষ্ণকুমারী’। এই নাটক থেকেই বাংলা নাট্য সাহিত্যে ট্রাজেডি রচনার সূচনা ঘটে। আরো পরে গিরিশচন্দ্রের ‘প্রফুল্ল’, বা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘শাজাহান’, ‘নুরজাহান’ ইত্যাদি নাটকে ট্রাজেডির বাতাবরণ যথার্থভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মধ্যযুগের ভারতীয় সাহিত্যে কোন ট্রাজেডি নাটক রচনা আলোচনা হয়নি। কারণ, দৈববাদী ভারতীয়রা জীবনের বিষাদময় পরিণতিকে বড় করে না দেখে জীবনের প্রাপ্তি ও সাফল্যকে  তুলে ধরতে চেয়েছিলেন'। কিন্তু পাশ্চাত্য দেশে জীবনের উত্থান পতনময় সংগ্রামকে বড় করে দেখানোর ফলে তা সাফল্যের মত তার পতন ও বিষাদ কেউ সমান প্রাধান্য দিয়েছেন তাঁরা।

তাই পাশ্চাত্য সাহিত্যে ট্র্যাজেডি বিকাশ হয়েছে। অ্যারিস্টটল ট্রাজেডির সূত্র দিয়ে বলেছেন- “ tragedy is the the imitation of an action that is serious, complete in itself and of certain magnitude through pity and fear arousing the cases of such emotions”।

অর্থাৎ ট্রাজেডিতে থাকবে পরিণতি, বিষয়টি হবে গাম্ভীর্যপূর্ণ, মনের মধ্যে জাগিয়ে তুলবে অনুকম্পা ও ভয় এবং পরিশেষে তার মোক্ষণ  ঘটবে। নাটকের চরিত্রের কোনো ত্রুটিকে অবলম্বন করে ট্রাজেডি ঘটবে এবং সেই ত্রুটি দৈবঘটিত বা চরিত্রগত হতে পারে। অ্যারিস্টটল আরো বলেছেন, নায়ক ট্রাজেডির জন্য দায়ী।

ট্র্যাজেডি সাধারণত কয়েকটি চরিত্রের সিদ্ধান্ত ও বিরোধের ফলে জাত বেদনার হলাহলকে প্রকাশ করে এবং সেই বেদনা যখন কোন চরিত্রের ত্রুটির ফলে ভয়াবহ রূপ লাভ করে দর্শক মনে করোনা ও ভীতির অনুভূতি জাগিয়ে সমাপ্তিতে এক  আনন্দময় ভাবের( ট্রাজিক ইম্প্রেশন) সৃষ্টি করে, তখনই ঘটে প্রকৃত ট্র্যাজেডি। নীলদর্পণ নাটকের কাহিনী বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই নাটকের ট্রাজেডির সম্ভাবনা বিচার করতে হবে। 

‘নীলদর্পণ’ নাটকের কাহিনী দেখি গোলক বসুর সম্ভ্রান্ত পরিবার অত্যন্ত অমানবিক উপায় উড ও রোগ সাহেব, গোপীনাথ প্রমুখের চক্রান্তে ধ্বংস হয়েছে।  গোলক বসুকে মিথ্যা অভিযোগে হাজতবাস করতে হয়েছে। অপমানে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আরেকটি কৃষিজীবী পরিবার সাধুচরণ ও তার কন্যা ক্ষেত্রমনীর জীবনে নেমে এসেছে আর এক অভিশাপ।

সাধুচরণের মাধ্যমে আমরা জেনেছি নবীনমাধব  সাহেবদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন এবং তার মৃত্যু হয়েছে। কিশোরী ক্ষেত্রমনী রোগ সাহেবের অত্যাচার শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় প্রাণ দিয়েছে। নাটকের মধ্যে এতগুলো মৃত্যু(৫টি) নাটকটিকে মৃত্যুর মিছিলে পরিণত করেছে।

এই ঘটনাগুলো মনে রাখলে ‘নীলদর্পণ’ নাটকটিকে ট্রাজেডি বলার পক্ষে প্রাথমিক বাধাগুলি বুঝতে পারা যায়। মনে রাখতে হবে, মৃত্যু মানেই ট্রাজেডি নয়। গোলক বসুর অপমানজনিত আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যু সূচনা হলো আর সাবিত্রীর অজ্ঞানকৃত অপরাধের মাধ্যমে মৃত্যু হল সরলতার এবং সেটি জানার পর সাবিত্রীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নাটকটি।

এতগুলি মৃত্যু ছোটখাটো কারণের বিশাল পরিণতি হিসেবে গণ্য করা যায়। এই কাহিনীর মধ্যে যে রস ঘনীভূত হয়েছে তা আংশিক বলে মনে হতে পারে। তোরাপ আর নবীনমাধব ক্ষেত্রমনীকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছিল। এই চেষ্টায় তারা প্রাথমিকভাবে সফল হলেও সেই সাফল্য ম্লান হয়েছে ক্ষেত্রমনীর মানসিক যন্ত্রণা ও মৃত্যুতে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে যে প্রত্যক্ষ বিরোধের সূচনা হয়েছে তার ফলে নবীনমাধবের প্রাণনাশ হয়েছে।

নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের চূড়ান্ত রূপ দেখানোর জন্য দীনবন্ধু নাটক লিখেছিলেন বলে ভূমিকায় জানিয়েছেন,- “নীলকরনিকরকরে  নীলদর্পণ অর্পণ করিলাম। এক্ষণে তাহারা নিজ নিজ মুখ সন্দর্শনপূর্বক তাহাদের ললাটে বিরাজমান স্বার্থপরতা- কলঙ্ক- তিলক বিমোচন করিয়া তৎপরিবর্তে পরোপকার-শ্বেতচন্দন ধারণ করুন।” এই উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। বাংলাদেশে এই আন্দোলন সফল হয়েছিল যা নীল বিদ্রোহে পরিণত হয়ে সাধারণ কৃষককে উদ্দীপিত করেছিল।

কলকাতার বুদ্ধিজীবী মহল এর সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন। নাটকটি অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল। এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশের দায়ে পাদ্রী জেমস লং-এর জরিমানা হয়েছিল। ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট এখানে কমিশন স্থাপন করে, পরে নীল চাষ নিষিদ্ধ করেছিল।

এতগুলো ঘটনাকে পটভূমিকায় রেখে আমাদের নাটকটি আলোচনা করতে হলে, কোন প্রথাগত  রস সৃষ্টির পথে দীনবন্ধু হেঁটেছেন কিনা বা এর সাফল্য ও ব্যর্থতার কথা ভাবার আগে মানুষের সামগ্রিক ব্যথার কথা এ নাটকের মূল আবেদন সৃষ্টি করে যে ট্রাজিক রসের সৃষ্টি করেছে তার কথা ভাবতে হবে। 

ট্রাজেডিতে যে ভীতি ও করুণার জাগরণ ঘটানো হয়, তা নীলদর্পণ নাটকের সঞ্চারিত হয়েছে। সুতরাং নীলদর্পণকে নাট্যতত্ত্বের বিচারে যথার্থ ট্রাজেডি হয়েছে কিনা- এভাবে না দেখে আরও বৃহত্তর অর্থে গণট্রাজেডি হিসেবে দেখেছেন অনেকে।

ট্রাজেডি নায়ককে নিয়ে সৃষ্টি হয়। তাই নায়কের সক্রিয়তা অনিবার্য।  গোলক বসুর জ্যেষ্ঠ পুত্র নানাবিধ সক্রিয়তা সৃষ্টি করেছে। তাই প্রাথমিক বিচারে সে এই নাটকের নায়ক। তবে, তার চরিত্রে যতটা বাগাড়ম্বর আছে ততটা কর্মকুশলতা নেই।

তাছাড়া মনে রাখতে হবে নবীনমাধব বিদ্রোহী নয়, সমাজসংস্কারক। একটি বিদ্যালয় স্থাপন তার প্রাথমিক স্বপ্ন- “দেশের বালকগণ আমার গৃহে বসিয়া বিদ্যার্জন করে।” এরপর অবশ্য তার দৃষ্টি স্বচ্ছ হয়েছে। আইনের অমানবিক  দিকগুলি তার দৃষ্টিকে খুলে দিয়েছে। পিতার মৃত্যু ও ক্ষেত্রমনীর প্রতি অবিচার তাকে সক্রিয় করেছে।

পাশাপাশি, তোরাপ সৎ, সাহসী, ধর্মপ্রাণ এক কৃষক। মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করেছে এবং ধীরে ধীরে সে এক প্রতিবাদী চরিত্রে পরিণত হয়েছে। ক্ষেত্রমনীকে উদ্ধার করে গভীর রাতে নদীতে সাঁতার দিয়ে সে সক্রিয়তার প্রমাণ রেখেছে। কাটা হাতের জ্বালায় বড় সাহেবের নাক কামড়ে নিয়ে পালিয়েছে। এভাবে এ নাটকে অন্তত দুজন নায়ক ও সহনায়কের এর মর্যাদা পেতে পারে।

নাটকের ট্রাজেডি ঘনীভূত করে নায়কের সক্রিয়তা ও গভীর ব্যথার মধ্যে যা এ নাটকে নবীনমাধব তোরাপের ক্ষেত্রে ঘটেছে। তবে অতিনাটকীয়তা এসেছে অনেক। এ নাটকের দ্বিতীয় ত্রুটি হল, প্রতিবাদ ও প্রধান সংলাপগুলি নাটকের দৃশ্যপটে প্রত্যক্ষ হয়নি।  সাধুচরণ বা কারো না কারো সংলাপের মাধ্যমে অনেক ঘটনা জেনেছি আমরা। আর সমাপ্তি লগ্নে এতগুলি পরপর মৃত্যুর কথা কখনোই স্বাভাবিক নয়। তাই মৃত্যুর পদ্ধতি প্রয়োগের মধ্যে করুণা জাগলেও তা ট্রাজেডি রসকে পূর্ণ করে না।

তাই আপাত আলোচনায় ‘নীলদর্পণ’ নাটকে সার্থক ট্রাজেডি অঙ্কিত হয়নি। নাটকটির রচনাকাল ও উদ্দেশ্যকে মনে রাখলে তা আশা করাও যায় না। সমাজের আপামর জনগণের উপর নেমে আসা ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী শোষণের যে পরিচয় নাটকে আছে তা সামগ্রিকভাবে একটি  গণট্র্যাজেডির সম্মান না করতে পারে। তাই দীনবন্ধু সচেতন ভাবে ট্রাজেডি সৃষ্টি করতে পারেননি ঠিকই, কালের পরিমন্ডলের কথা ভেবে এ নাটককে ট্রাজেডি বলাই সমীচীন।

বাংলা সাহিত্য আলোচনা ।  নীলদর্পণ । দীনবন্ধু মিত্র। Tragedy of Nil Darpan by Dinabandhu Mitra

Related Tags:

Nil Darpan UPSC

Nil Darpan summary

Nil Darpan characters

Nil Darpan highlighted the pitiable condition of

Nil Darpan natok english anuvad kare ke

Nil Darpan was written by

who wrote Nil Darpan in English

Nil Darpan Bengali

Nil Darpan Natok

Nil Darpan ke lekhak

Nil Darpan natok bengali pdf

Nil Darpan Natak

who translated Nil Darpan in English

who was sentenced for the English translation of Nil Darpan

Nil Darpan

Bengali Literature

tragedy of nildarpan

#nildarpan 

logoblog

Thanks for reading Tragedy of Nil Darpan by Dinabandhu Mitra

Previous
« Prev Post

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam links in the comment box.