Footer Logo

২০২১/০৫/২৭

Satire in Nil Darpan by Dinabandhu Mitra

  BAIRAGYA SHIKSHA NIKETAN       ২০২১/০৫/২৭

বাংলা সাহিত্য আলোচনা: নীলদর্পণ নাটক:  নীলদর্পণ নাটকে হাস্যরস Satire in Nil Darpan by Dinabandhu Mitra

নীলদর্পণ নাটকে হাস্যরস Satire in Nil Darpan by Dinabandhu Mitra
নীলদর্পণ নাটকে হাস্যরস Satire in Nil Darpan by Dinabandhu Mitra

নীলদর্পণ নাটকে হাস্যরস: Satire in Nil Darpan by Dinabandhu Mitra

রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমের হাস্যরসের মূল্যায়ন করে লিখেছেন, বাংলা সাহিত্যে নির্মল উজ্জ্বল হাস্যরসের সৃষ্টিকর্তা বঙ্কিমচন্দ্র । বঙ্কিমের অনুসরণে পরবর্তী যুগে সাহিত্যে হাস্যরস উপাদেয় হয়ে উঠেছে। আমাদের আলোচ্য, দীনবন্ধু মিত্র কবি ঈশ্বর গুপ্তের শিষ্যরূপে সাহিত্য সৃষ্টিতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ঈশ্বর গুপ্তের রচনায় যে হাস্যরস প্রাধান্য পেত তা মধ্যযুগীয় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। দীনবন্ধু তাঁর প্রহসনগুলিতে গুরুর প্রভাব সম্পূর্ণ এড়াতে পারেননি । তবে নীলদর্পণ নাটকে চেষ্টাকৃত হাস্যরস নাই। এখানে চরিত্রগুলির সংলাপে যে অসঙ্গতি এসেছে, তা থেকে সৃষ্টি হয়েছে হাস্যরস। দীনবন্ধুর সৃষ্ট হাস্যরস অনেকটাই শাব্দিক,হিউমার ধর্মী, যা জীবন সত্যের সাথে গভীরভাবে ততটা যুক্ত নয়।

হাস্যরস প্রধানত দুই প্রকার, শব্দধর্মী বা বাচনিক,আন্তরিক । প্রথমধারার হাস্যরস সৃষ্টিকারী শিল্পীরা বাহ্যিক অঙ্গভঙ্গি, অসঙ্গত শব্দ প্রয়োগ ইত্যাদির সাহায্যে দর্শক-পাঠককে কিছুটা আনন্দ দান করেন। অনেকটা ক্যারিকেচার -এর মত কিছুটা রঙ্গ-ব্যাঙ্গ, ভাঁড়ামো এই শাব্দিক হাস্যরসের প্রধান অবলম্বন। কিন্তু, কোন সূক্ষ্মতর ব্যঞ্জনার সাহায্যে Dramatic irony সৃষ্টি করে একজন সার্থক লেখক যে তীব্র হাস্যরস সৃষ্টি করেন, তার চরিত্র পৃথক। এই ইঙ্গিতধর্মী, ব্যঞ্জনাময় হাস্যরস অবশ্যই দীনবন্ধুতে লব্ধ নয় ।

যিনি হাস্যরসিক, তিনি বস্তুনিষ্ঠ মন নিয়ে জীবনকে দেখেন এবং তার মধ্য থেকে রস আহরণ করেন। আমরা ব্যক্তি জীবনে অসঙ্গতির সীমা মেনে চলি। কিন্তু জীবনে যে অসংখ্য ভুল-ভ্রান্তি, অসংগতি জমা হয় তার খবর রাখি না। যিনি হাস্যরসিক তাঁর কাজ হল জীবনের এই এুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতিকে প্রদর্শন করা। জীবন-রসের রসিক যিনি তিনি অতি তুচ্ছ সাধারণ বিষয়ের মধ্যেই আনন্দের উপাদান খুঁজে পান। এর পিছনে তার সহানুভূতিশীল মন, স্নিগ্ধ দৃষ্টি আর প্রসন্ন হৃদয় কাজ করে। জীবন সম্পর্কে ঔদার্য আর সমপ্রানতার অনুভূতি হাস্যরসিকের বৈশিষ্ট্য। শুধু আঘাত করা, ব্যঙ্গ করা হাস্য রসিকের উদ্দেশ্য নয়; জীবন সম্পর্কে এক তীর্যক দৃষ্টি হাস্যরসকে বিশিষ্ট করে তোলে। যেমন শেক্সপিয়রের ফলস্টাফ,দীনবন্ধুর নিমচাঁদ।

বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে স্থুল হাস্যরসের প্রয়োগ ছিল। সেখানে হাস্যরস ছিল আদিরসের সহযোগী। এছাড়া কবি-সংগীত, তরজা ইত্যাদিতে কথার মারপ্যাঁচ ঘটিয়ে হাস্যরস সৃষ্টি করা হত। ঈশ্বর গুপ্ত সেই ধারারই উত্তরাধিকারী ছিলেন। কিন্তু তার শিষ্য দীনবন্ধু যদিও কতগুলি স্থুল সামাজিক বিষয় গ্রহণ করেছিলেন, তবু তার হাস্যরসে অশ্লীলতা যেমন নেই, তেমনি অন্যকে উত্তেজিত করার আগ্রহও নেই। পরিবর্তে তিনি বক্তার কথা বলার ভঙ্গির মধ্যে, শব্দের ব্যঞ্জনার মধ্যে,অশিক্ষিত মানুষের মুখে শক্ত অচেনা শব্দ প্রয়োগে এমনভাবে  অসঙ্গতি সৃষ্টি করেছেন, যাতে হাস্যরস প্রকাশ পেয়েছে।

দীনবন্ধু এক বস্তুনিষ্ঠ মন, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি আর সহানুভূতিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে সকল শ্রেণীর মানুষকে দেখেছেন। বঙ্কিম তাঁর এই পবিত্র মন ও অপার সহানুভূতির প্রশংসা করেছেন। তাঁর কাছে নিমচাঁদ, গোপীনাথ বা রাজীবলোচন করুণাঘন প্রসন্নতা লাভ করেছে; সেই  কারুণ্যের মধ্যেই হাস্যরস অভিব্যক্ত ছিল। যেহেতু দীনবন্ধু জীবনকে খন্ডাংশে দেখতে চাননি, তাই নীলকর অত্যাচারের পাশাপাশি অত্যাচারী ও অত্যাচারিত মানুষগুলোর অন্তর রূপটিকেও তুলে ধরেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা যে অবর্ণনীয় উৎপীড়নের চিত্র এই নাটকে আছে, যেখানে হাস্যরসের এই স্নিগ্ধ প্রলেপ না থাকলে নাটকটি হয়তো অসহনীয় হয়ে পড়তো।

আলাদা করে তিনি এ নাটকে হাস্যরস সৃষ্টি করেননি। এ নাটকের দুঃসহ ট্রাজেডিকে কিছুটা হালকা করার জন্য এসেছে হাস্যরস Dramatic relief ছলে। এই হাস্যরস সৃষ্টিতে তাই কোন উদ্দেশ্য  নাই। কাহিনী এমনই, পরিতৃপ্ত মানুষরা যেমন আলাপের মধ্যে খোশমেজাজে রঙ্গ করে কথা বলে, তার সুযোগ এ নাটকে ছিল না। তাই কতকগুলি চরিত্রে বক্তব্যভঙ্গিতে অসঙ্গতি সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে লেখক হাস্যরস সৃষ্টির সুযোগ নিয়েছেন। বৃদ্ধা পরিচারিকা আদুরির উক্তি ও ইঙ্গিতের মধ্যে আছে হাস্যরস। তরুণী বধূ ক্ষেত্রমনীকে লালসা পরিতৃপ্ত করতে ধরে নিয়ে গেছে সাহেব। তাই শুনে আদুরী অযাচিতভাবে তার মনোভাব ব্যক্ত করেছেঃ

“থু থু থু ! গোন্দো! প্যাঁজির গোন্দো! সাহেবের কাছে কি মোরা যাতি পারি, থু থু ! মুই তো আর একা বেরোবো না, মুই সব সইতে পারি প্যাঁজির গোন্দো সইতি পারিনে..থু থু, গোন্দো !প্যাঁজির গোন্দো!”

 যৌবনে স্বামীকে হারিয়েছিল আদুরী। তার সেই অতৃপ্ত ভোগতৃষ্ণা তার বিপরীত কথায় তার জীবন তৃষ্ণাকেই প্রকাশ করেছে। এখানে কথার বৈপরীত্যে এসেছে হাস্যরস । সে এখনো যৌবনের স্মৃতিচারণা করে । সে বৃদ্ধা হয়েছে, তবু তার ধারণা তাকে পেলে সাহেবরা তুলে নিয়ে যাবে। আর সাহেবের সাথে যেতেও তার আপত্তি নেই, শুধু আপত্তি হলো মুখে পেঁয়াজের গন্ধ নিয়ে। এই তুচ্ছ বিষয়ে আপত্তি যে বাধা হতে পারে না, তা অনুভব করে আমরা অনাবিল হাস্যরস উপভোগ করি। তেমনি রেবতীর কিছু সংলাপ হাসির খোরাক হয়। নীলকুঠির কামরাকে ‘কুঠির কামরাঙ্গার ঘর’ বলেছে সে।

অশিক্ষিত রায়তরা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছে- ‘মাচের টক’। মোক্তারকে বলেছে-- ‘সুমুন্দির পো’, দুই মোক্তারের বাক্ যুদ্ধকে বলেছে- “ধলা দামড়া আর জমাদ্দারদের বুড়ো এঁড়ের নড়ুই বেদলো।” কর্তামশাইকে বলেছে- “বসে আছেন য্যান গজেন্দ্রগামিনী”। গোপীনাথ ব্যঙ্গ করেছে- “সাধু, তোর সাধুভাষা রাখ,চাসার মুখে ভালো শুনায় না,গায়ে যেন ঝাঁটার বাড়ি মারে”। বুট জুতোসমেত সাহেবের লাথি খেয়ে একজন রায়ত বলেছে-- “গোডার পা য্যান বল্দে গরুর খুর”। তারা চাবুককে বলেছে’-- “শ্যামচাঁদের ঠেলা”। মনের সুখে সাহেবকে পিটিয়ে চলে যাবার সময় তোরাপ বলেছে- “ছোট সাহেব স্যালাম মুই আসি”,তখন সাহেব স্বীকারোক্তি করেছে- “বাই জোভ বিটেন টু জেলি”।

বস্তুত, গ্রাম্য অশিক্ষিত মানুষের রসিকতাবোধ যেন এক সহজাত ধর্ম । কোন দুঃখ, কষ্ট, নিপীড়ন তাদের প্রাণের আবেগকে দমন করতে পারেনা । সব রকম অভিজ্ঞতা থেকে তারা কৌতুকরসটুকু ছেঁকে নেয়। নিজেদের দুর্বিসহ অবস্থাকে হাসির আলোয় কিছুটা হালকা করা এর উদ্দেশ্য । যেমন করেছে গোপীনাথ । ইংরেজদের গোলামী করে ও উড সাহেবের লাথি খেয়ে বলেছে- “সাতশত শকুনি মরিয়া একটি নীলকরের দেওয়ান হয় নচেৎ অগননীয় মোজা হজম হয় কেমন করে? কি পদাঘাতই করিতেছে, বাপ! ব্যাটা যেন আমার কালেজ আউট বাবুদের গৌণপরা মাগ।”

 এ নাটকে সাধারণ মানুষের মুখের সংলাপে সৃষ্টি হয়েছে হাস্যরস । এই হাস্যরসের বৈশিষ্ট্য হলো, তা প্রানধর্মের সাথে যুক্ত হয়ে নাটকের চরিত্রগুলিকে করেছে স্পষ্ট ও উজ্জ্বল।

Related Tags:

Nil Darpan UPSC

Nil Darpan summary

Nil Darpan characters

Nil Darpan highlighted the pitiable condition of

Nil Darpan natok english anuvad kare ke

Nil Darpan was written by

who wrote Nil Darpan in English

Nil Darpan Bengali

Nil Darpan Natok

Nil Darpan ke lekhak

Nil Darpan natok bengali pdf

Nil Darpan Natak

who translated Nil Darpan in English

who was sentenced for the English translation of Nil Darpan

Nil Darpan

Bengali Literature

tragedy of nildarpan

#nildarpan 

logoblog

Thanks for reading Satire in Nil Darpan by Dinabandhu Mitra

Previous
« Prev Post

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam links in the comment box.