নীলদর্পণ Nil Darpan Natok by Dinabandhu Mitra নীলদর্পণ । দীনবন্ধু মিত্র ।
![]() |
Nil Darpan Natok by Dinabandhu Mitra |
'নীলদর্পণ’ নাটকটি নাটক নয়, নাট্যচিত্র”- আলোচনা করো।
উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে নকশা জাতীয় রচনা ব্যাপক প্রচলন হয়েছিল । ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’, ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’, ‘কলিকাতা কমলালয়’, ‘নববাবুবিলাস’ ইত্যাদি নকশাগুলি বাংলাসাহিত্যে হাস্যরস ধারার সূচনা করে ।প্যারীচাঁদের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ অনুরূপ রচনা। প্রায় সবই গদ্যে রচিত । তবে ঈশ্বর গুপ্ত ,ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমূখ কবিতার আকারে এই শ্রেণীর রচনা করেছেন । এই ধারার দুই শ্রেষ্ঠ শিল্পী- মধুসূদন দত্ত ও দীনবন্ধু মিত্র । উভয়ে দুটি প্রহসনজাতীয় রচনার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত রেখেছেন ।
নকশা ও নাটক দুটি ভিন্নধর্মী শিল্পমাধ্যম । নকশা বলতে বোঝায় আপাত অসংলগ্ন কিছু ঘটনার চিত্র, উপস্থাপনার গুনে একে নাট্যচিত্র বলা যায় । কিন্তু নাটকে উপস্থাপিত চিত্রগুলি পরস্পরের সঙ্গে ঘটনা বা ভাবাদর্শে আন্তরিক যোগে যুক্ত থাকবে । নাটকে তাই কোন বিশেষ দৃশ্য, বিশেষ ঘটনাকে আলাদা করা যায় না । এরকম করলে নাটকীয় ঐক্য ব্যাহত হয় ।
কিন্তু কোন কোন সমালোচক ‘নীলদর্পণ’ নাটককে নাট্যচিত্র বলেছেন(বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস- ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য) । নাট্যচিত্র বলতে বোঝায় কিছু কিছু নাটকীয় ঘটনাবলী, যেগুলির মধ্যে কোন সুসংহত নাট্যন্যায় (ড্রামাটিক লজিক) ও নাট্যক্রিয়া রক্ষিত হয়নি । তাই নাটক হল একটি একক ও সম্পূর্ণ ঘটনার আবর্তনের ফলে জাত শিল্পকর্ম ।
নাটকের প্লটে এমন কোন ঘটনা থাকে না যা কেন্দ্রীয় সূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন । আবার, এই ঘটনাগুলি পরস্পর সন্নিবদ্ধতায় এতই গভীর যে, কোন একটি ঘটনা বাদ দিলে নাট্যক্রিয়া অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে । সুতরাং নাটকের ঘটনায় যদি পারস্পরিক সংঘবদ্ধতা না থাকে তাহলে নাটক নাট্যচিত্র হয়ে পড়ে ।
‘নীলদর্পণ’ নাটকে আপাত বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা আছে । এই নাটক দুটি পরিবারের ভাগ্য বিপর্যয়ের ইতিহাস । বিন্দুমাধব পয়ারে যে আক্ষেপকরেছে, তাতে বসু পরিবারের বেদনা ধরা পড়েছে।
“অবিচারে কারাগারে পিতার নিধন ।
নীলক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠভ্রাতা হলেন পতন ।।
পতিপুত্র শোকে মাতা হয়ে পাগলিনী ।
স্বহস্তে করেন বধ সরলাকামিনী ।।”
এই বেদনাবহ কাহিনী এই নাটকের একটি বৃত্তকে সম্পূর্ণ করেছে ।
পাশাপাশি রাইচরণ ও সাধুচরণের পরিবারে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তাও একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা । ক্ষেত্রমনীর অপমানের ও মৃত্যুর পর মাতা রেবতীর হাহাকারের মধ্যে সেই কাহিনী শেষ হয়েছে । ‘’মুই সোনার নোককী ভেস্যে দিতে পারব না রে, মুই কনে যাব রে, সাহেবের সঙ্গে থাককা যে মোর ভাল ছিল মা রে, মুই মুখ দেখে জুড়াতাম মা রে ।”
নীলকুঠির উড ও রোগ সাহেবের ব্যাপক অত্যাচার, বসু পরিবারের পুকুরপাড়ে নীল পত্তন, গোলক বসুর বিচার, কয়েদ ও আত্মহত্যা, নবীমাধবের প্রতিবাদ ও মৃতু, ক্ষেত্রমনীকে উদ্ধার করতে গিয়ে তোরাপের লাঞ্ছনা প্রভৃতি প্রতিটি ঘটনাই কার্যকারণ সম্পর্কহীন ও কেন্দ্রচ্যুত বলে মনে করেছেন অনেকে । কেন এই ধরনের এতগুলি ঘটনা একটিমাত্র নাটকে আহৃত হলো, প্রাথমিকভাবে তার কোন যুক্তি মেলে না । এই কারণে নাটকটিকে অনেকে নাট্যচিত্র বলেছেন ।
এইসব ঘটনাবলী হয়তো একটি কারণে সন্নিবেশিত হয়েছে । কারণটি নাটকের শিল্পগুণের পক্ষে যতটা জরুরি, তার থেকে অনেক বেশি বিবেচ্য তার মানবিক ভাবের জন্য ভাবের জন্য । মনে রাখতে হবে এই নাটকটি দীনবন্ধু একটি প্রত্যক্ষ দৃশ্যকে কেন্দ্র করে রচনা করেছিলেন ।
অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের হাতে কিভাবে গ্রাম বাংলার অর্থনীতি ও সামাজিক মান সম্মান পদদলিত হচ্ছিল তারই এক প্রত্যক্ষ ও নিপুন চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন, যাতে এই নাটকের প্রচারে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় এবং যাতে ইংল্যান্ডের শাসককুল এই নিষ্ঠুর অত্যাচারের কথা জেনে তার প্রতিকার করেন, সেই উদ্দেশ্যে নাটকটি লিখেছেন তিনি ।
এটি রচনাকালে তিনি তাঁর কালের কথাই ভেবেছিলেন । এটি ভালো নাটক হয়েছে কিনা বা পরবর্তীকালে জনপ্রিয় থাকবে কিনা, তিনি নাট্যকারের সম্মান পাবেন কিনা- এসব প্রশ্ন তাঁঁর কাছে অবান্তর ছিল ।
শুধুমাত্র অন্তরের আবেগ ও হৃদয়ের পুঞ্জিভূত মানবতার জন্য তিনি সে যুগের মূক, দরিদ্র জনগণের হৃদয়ের কথাকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন । নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে কীভাবে জীবন ও সম্পদের অপব্যবহার হচ্ছে, তা এই নাটকের প্রধান আলোচ্যবস্তু । নীলকরের দাদন গ্রামীণ রায়ত স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে না । “একবার দাদন লইলে রায়তের সপ্তপুরুষ ক্লেশ পায় ।” সেই ক্লেশকে উপস্থিত করার জন্য নাটক রচিত ।
‘ভাত মারবে নীল বাঁদরে’- এই প্রবাদ যে কত সত্য তা উনিশ শতকের গ্রাম সমাজ সাক্ষী । গরিব চাষির পেটের ভাতের টান পরার কাহিনী নাটকের কেন্দ্রীয় ঘটনা । সেই অর্থে নাটকটি উদ্দেশ্যমূলক, সন্দেহ নেই । এই উদ্দেশ্য থাকার ফলে তিনি দরিদ্র জনগণের মর্মবাণীকে প্রকাশ করেছেন, তাদের অত্যাচারের বিভিন্ন ঘটনাগুলিকে সাক্ষ্য রূপে হাজির করেছেন ।
এই চিত্রমালা কতখানি শিল্পসম্মত হয়েছে বা নাটকের সাথে যুক্ত হয়েছে সে প্রশ্ন করতে গেলে মানবিকতাকে বিসর্জন দিতে হয় । যা দেখেছেন তিনি, তাকে হুবহু তুলে ধরেছেন । তাই সাহিত্যিক সুলভ গ্রহণ, বর্জন, পরিমার্জন করেননি । কারণ সাহিত্য করতে গিয়ে পাছে বাস্তবচিত্র বাদ পড়ে যায় বা মানবিকতা বিঘ্নিত হয়, তাই সে পথে হাঁটেনি তিনি ।
‘নীলদর্পণ’ রচনার সমকালীন পরিমণ্ডলকে মনে রাখলে এই নাটকের শিল্পগুণ বিচারের প্রসঙ্গ থেকে বিরত থাকতে হয় । কিন্তু, মনে রাখা দরকার শুধু সমকালীন দাবি পূরণ করাই সাহিত্যের উদ্দেশ্য নয় । সার্থক শিল্প সর্বত্র তার সময়কে অতিক্রম করে । কালের প্রয়োজনের সীমা অতিক্রম করে গেলে সমালোচনার সাহায্যে পুনর্বিচারের কথা এসে পড়ে ।
এই পুনর্বিচারেই ‘নীলদর্পণ’ নাটককে কিছুতেই সার্থক নাটক আখ্যা দেওয়া যায় না । কতকগুলি কার্যকারণ সূত্রহীন চিত্র প্রকাশের ফলে নাটকটির অর্গানিক হোলনেস বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে । এই কারণে এই নাটককে নাটক না বলে নাট্যচিত্র বলেছেন অনেকে ।
বাংলা সাহিত্য আলোচনা । নীলদর্পণ । দীনবন্ধু মিত্র ।
Related Tags:
Nil Darpan upsc
Nil Darpan summary
Nil Darpan characters
Nil Darpan highlighted the pitiable condition of
Nil Darpan natok english anuvad kare ke
Nil Darpan written by
who wrote Nil Darpan in english
Nil Darpan bengali
Nil Darpan natok
Nil Darpan ke lekhak
Nil Darpan natok bengali pdf
Nil Darpan natak
who translated Nil Darpan in english
who was sentenced for english translation of Nil Darpan
Nil Darpan
Bengali Literature
#nildarpan
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam links in the comment box.