Footer Logo

২০২১/০৫/২৮

Santosh Kumar Ghosh Choto Golpo Vebechilam

  BAIRAGYA SHIKSHA NIKETAN       ২০২১/০৫/২৮

ভেবেছিলাম বাংলা ছোটগল্প সন্তোষ কুমার ঘোষ (Santosh Kumar Ghosh Choto Golpo)


Santosh Kumar Ghosh Choto Golpo Vebechilam
Santosh Kumar Ghosh Choto Golpo Vebechilam


লেখক ও সাংবাদিক সন্তোষ কুমার ঘোষ (Santosh Kumar Ghosh) বাংলা সংস্কৃতি জগতে এক মননশীল ব্যক্তিত্ব রূপে পরিচিত বিদগ্ধ পুরুষ। তার পেশা সাংবাদিকতা আর সাহিত্য রচনা তার মনের আরাম ও প্রাণের আনন্দ। এক বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকে সন্তোষ কুমার ঘোষ (Santosh Kumar Ghosh) যেমন বাংলার সমাজ ও ব্যক্তি মানুষকে অতি কাছ থেকে দেখতে পেয়েছিলেন, তেমনি এক কথা সাহিত্যিক হিসেবে সেই নিপুন পর্যবেক্ষণ শক্তিকে ব্যবহার করেছেন ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনায়। তার সাহিত্যকর্ম সংখ্যা-প্রাচুর্যে নয়, বিষয়বস্তু নির্বাচনে ও রসোত্তীর্ণতায় গৌরবান্বিত। 

সন্তোষ কুমার ঘোষের লেখা 'ভেবেছিলাম' নামক ছোটগল্পের শিল্প সার্থকতা বিচার করো।

সন্তোষ কুমার ঘোষ এর গল্প রচনার বৈশিষ্ট্য:


সন্তোষ কুমার (Santosh Kumar Ghosh) এর ছোটগল্পে আমরা মনোবিশ্লেষণ এর তীক্ষ্ণ আলোকে নিজেদের দেখে চমকে যাই। এই বাহ্যিক আড়ম্বরপূর্ণ বাকসর্বস্ব কৃত্রিম বাঙালি সমাজ ও ব্যক্তি মানুষ তাঁর গল্পে বারবার এসে হাজির হয়েছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে আর্থিকভাবে ভেঙে যাওয়া নিঃস্ব বাঙালি জীবনের দুই একটি ভয়ঙ্কর চিত্র তাঁর গল্পের প্রধান উপাদান। 


সন্তোষ কুমার ঘোষ এর 'ভেবেছিলাম' গল্পে বর্ণিত সমাজচিত্র:


আমাদের আলোচ্য 'ভেবেছিলাম' গল্পটি তেমনি এক অতি নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের জীবনের জলছবি। বিষয়বস্তুর দিক থেকে গল্পটির দুটি ভাগ বা দুটি পর্ব। একটি পর্বে একটি গ্রাম জীবনের নিষ্করুণ অন্ধকারময় ছবি আছে। দ্বিতীয় পর্বে আছে আলোকোজ্জ্বল কলকাতার মাঝে করুন ছবি। আপাতদৃষ্টিতে এই চিত্র দুটির মধ্যে স্থানিক ব্যবধান ও পার্থক্য থাকলেও এক আন্তরিক যোগে চিত্র দুটি একই প্রতীকী তাৎপর্য বহন করছে। 


গ্রাম ও শহরের ছবি দুটি কোন গ্রাম বা কোন শহরের নয়, জীবন যন্ত্রণায় বিধ্বস্ত আর্থিক অনটনে দিশাহারা জীবনের অন্ধকার এর ছবি। দুটি ছবি দেখেছে একটি বালক যে অপার বিস্ময়ে প্রথমে দেখেছে তার জন্মভূমি গ্রামকে, পরে দেখেছে  তার কর্মভূমি শহরকে। যেন লেখকের আত্মজ হয়ে এই বালকটি জীবনের ছবি দেখেছে তার মনের ক্যামেরায়।


প্রথম ছবিতে সে যেমন তাদের যন্ত্রণার কারণ খুঁজে পায়নি, পরে কলকাতার বস্তিতে এসে তার মনোভঙ্গির কোন পরিবর্তন হয়নি। তাই প্রথম ছবিতে বালকটি শুধু ভেবেছে কেন তাদের দারিদ্র্য। দ্বিতীয় ছবিতে সে ভেবেছে তার দিদিকে যে বড়লোকের ছেলেটি চপ কাটলেট খাওয়ায় কাঁচা পেঁয়াজ দিয়ে সে কেন তাদের সকলের জন্য একশ গ্রাম পুঁটি মাছ এনে দেয় না। 


তাই গল্পটির নাম সঙ্গত কারণে 'ভেবেছিলাম'। নামটি গভীর ব্যঞ্জনাময়। তার ভাবনার মধ্যে বা তার ভাবনাই যেন প্রতিফলিত হয়েছে গল্পটিতে। সন্তোষ কুমারের এই গল্পে কোন ছায়াশীতল পক্ষী মিলনে ধনধান্যে পুষ্পে ভরা শ্যামল স্নিগ্ধ বাংলাদেশের গ্রাম নয়, এই গ্রাম কোন কবির কল্পনা নয়। যে গ্রামকে একটি দরিদ্র বালক সন্তোষ কুমার ঘোষ নিজের জীবনে দেখেছিলেন, সেরকমই একটা হতাশাগ্রস্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্রাম। বর্ষায় পথে-ঘাটে কাদা, সাপ, ব্যাঙ, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, প্রচন্ড বৃষ্টি, ঘরে ফুটো চাল থেকে ঝরঝর করে জল ঝরছে জল। একটা খাটের উপর পরিবারের সবাই পা তুলে বসে আছে।


চারিদিকে ঘন অন্ধকার, সাপের ব্যাঙ গেলার করুন শব্দ, জলে ছপ ছপ করে পা ফেলে এগিয়ে যাওয়ার শব্দ, নিশীথ অন্ধকারে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে শুনতে একপেট খিদে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়া একটি কিশোরের কাছে বাংলার গ্রাম রোমান্টিক ভাবে ধরা দেয়নি। রোগজীর্ণ বালকটি ম্যালেরিয়া জ্বরে তিত কুইনাইন আর পুকুরের জলে গোলা বার্লিতে ভালবাসতে পারেনি গ্রামকে। ভেবেছে, মিথ্যাই ভেবেছে যদি কোনো উপায়ে এই পরিবেশ থেকে একবার বেরিয়ে পড়া যেতে পারত তাহলে হয়তো তাদের জন্য অপেক্ষা করছে কোন আলোকোজ্জ্বল পৃথিবী। এই ভাবনার সূত্র ধরে গল্পটি এসে পৌঁছেছে দ্বিতীয় পর্বে। 


অপার বিস্ময় নিয়ে কিশোরটি এসেছে কলকাতায়। আজব শহর কলকাতা। আলোকোজ্জ্বল ধনীদের বিলাস প্রাসাদ। রাস্তায় শব্দ করে ছুটে চলে বাস মোটরগাড়ি। প্রতিদিন রথের মেলা। রাস্তায় লোকজন, আনন্দ কোলাহল বিদ্যুতের আলোয় চোখ ঝলসে যাওয়া এই কলকাতার মধ্যে আছে যে তাদের দরিদ্র গ্রামটি এবং সেখানে গিয়ে থাকতে হবে একথা বোঝেনি বালকটি। তাই প্রথম দিন কলকাতার বস্তিতে ঢুকে নরকযন্ত্রণায় শিউরে উঠেছে।


এখানেও কর্দমাক্ত গলি, চারিদিকে উনুনের ধোঁয়া, ল্যাম্পপোস্টের টিমটিমে জ্বলা বাতিতে অন্ধকার আরো ভয়াবহ। এরকম এক বস্তির গলিতে একটা এঁদো পচা জানালাবিহীন বারো ঘর তের উঠানের এক ভাড়া করা ঘরে এসে পৌঁছেছে কিশোরটি। এখানে যেন অভাব আরও প্রকট হয়ে নখ ও দাঁত বের করেছে। এখানে অনেক কিছু নেই- হাওয়া বাতাস নেই, জলখাবার কল নেই, কল ঘরের দরজা নেই, মেয়েদের আব্রু নেই, সবচেয়ে বড় নেই হল তার বাবার চাকরি নেই। 


1930-1940 এর দশকে নগর কলকাতার কলকারখানায় লক আউট, স্ট্রাইক, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মজীবনের অভাব, দারিদ্র গ্রাস করেছিল নগরজীবনকে। শ্রমজীবী মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে আত্মহত্যা করেছে সপরিবারে। যারা পারেনি তারা অনেকে মূল্যবোধ ও সততা বিসর্জন দিয়ে নিজেকে পশুর স্তরে নামিয়ে এনেছিল। ছেলেটি এতদিন বাহ্যিক দারিদ্র্য দেখেছে। এখন দেখল মা বাবা সামান্য কারণে ঝগড়া করে, বাবা যখন খুশি ঘরে ফেরে, কোনদিন বা ফেরে না, কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে। পাশের বাড়ির ছেলেটা দিদির সঙ্গে কথা বলেছে বলে দিদি কে মারে। দিদির হাত ধরে টেনেছে বলে বাড়িওয়ালাকে গাল দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়।


ছেলেটার চোখের সামনে বদলে যায় তার চেনা জগৎ তার বিশ্বাসের পৃথিবী। নিত্য দরিদ্রের ঘরেও অতিথি আসে। আর যেদিন মুখে চপ কাটলেট আর পেঁয়াজের গন্ধ নিয়ে সিনেমা দেখে ফিরে আসে দিদি, সেদিন ছেলেটি কান্নায় ভেঙে পড়ে। গল্পটি চরমে উঠেছে দিদির আত্মহত্যা করতে যাওয়ায়। নাগরিক সভ্যতা গ্রামের সরল কিশোরীকে কেমন করে গিলে খাবে তার বেদনাময় ইঙ্গিত দিয়ে লেখক শেষ করেছেন গল্পটি। আর পরিশেষে ছেলেটি অনুভব করেছে, "দেশের বাড়িতে যখন ছিলাম, তখনো এরকম হত, তবু কলকাতা ছিল। ভাবতাম কলকাতায় এলেই... এলাম, অথচ আসাও হলো না। তার চেয়ে বড় কথা, এই ক'বছরে আর একটা কলকাতাও তৈরি করা হয়নি, আর কোনও কলকাতাই রইল না।"


জীবনদর্শনের পুঙ্খানুপুঙ্খ দৃষ্টিপাতে জীবনের এক প্রতিরূপ সৃষ্টি করে লেখক (Santosh Kumar Ghosh) আমাদের আর একবার নতুন করে চিনিয়ে দেন এই বাস্তব পৃথিবীকে। আর সেই জীবন-দর্শনের সত্যে গল্পটি সার্থক হয়েছে। 


বাংলা সাহিত্য

বাংলা ছোটগল্প

আধুনিক বাংলা গল্প

সন্তোষ কুমার ঘোষ এর লেখা ভেবেছিলাম গল্প

সন্তোষ কুমার ঘোষ এর গল্প

সন্তোষ কুমার ঘোষ ভেবেছিলাম

বাস্তব জীবনের গল্প

santosh kumar ghosh golpo santosh kumar ghosh choto golpo santosh kumar ghosh golpo somogro
vebechilam by santosh kumar ghosh
bengali short story by santosh kmar ghosh
bengali short story
bengali literature
logoblog

Thanks for reading Santosh Kumar Ghosh Choto Golpo Vebechilam

Previous
« Prev Post

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam links in the comment box.