নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতার আলোচনা // Nirjharer Swapnabhanga Poem by Rabindranath Tagore
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'প্রভাত সঙ্গীত' কাব্যের অন্তর্গত। নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনের পরিচয় সুন্দর ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এই কবিতাটিতে রচনাকাল ও রচনা স্থানের নাম নেই।
জীবনস্মৃতি গ্রন্থ থেকে জানা যায়, 1289 বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে কবি যখন 10 নং সদর স্ট্রিটে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে থাকতেন, সেই সময় এটি লেখা হয়েছিল। নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতায় যে মহাসাগরের কথা আছে তা পরবর্তীকালে মহামানবের রূপান্তরিত হয়েছে। রচনা সময়ে এই কবিতায় 201 টি ছত্র ছিল।
1290 বঙ্গাব্দে প্রকাশের সময় ছত্র সংখ্যা হয়েছিল 268 টি। এরপরে পরিমার্জন করে কবিতাটির বর্তমান ছত্র সংখ্যা হয়েছে 154 টি। আবার সঞ্চয়িতা কাব্যে প্রকাশের সময় এর ছত্র সংখ্যা হয়েছে 43 টি।
প্রশ্ন: 'নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ' কবিতায় রবীন্দ্রনাথের জীবনের কোন সত্য প্রকাশ পেয়েছে তা আলোচনা করো।
নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ হলো রবীন্দ্রনাথের কাব্যের উন্মেষ পর্বের অন্যতম কবিতা। নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্ম-উপলব্ধি কথা আছে। তিনি লিখেছেন, সদর স্ট্রিটের বাড়িতে থাকবার সময়ে গাছগুলির পাতার অন্তরাল থেকে তিনি সূর্যোদয় দেখেছিলেন।
এরপরে তার অনুভব, হঠাৎ এক মুহূর্তের মধ্যে তার চোখের উপর থেকে যেন পর্দা সরে গেল। তিনি উপলব্ধি করলেন, বিশ্বজগতের মহিমা অপরূপ। পৃথিবীর সর্বত্র যেন আনন্দ এবং সৌন্দর্য বিরাজ করছে। এই উপলব্ধির পরে তার মনের মধ্যে যে বিষাদের অন্ধকার ছিল তা দূর হয়ে গেল। কবির প্রাণ জেগে উঠলো।
মানুষের জীবন বিষাদের অন্ধকারে ঢেকে থাকে। মানুষকে সারাজীবন ধরে বন্দি করে রাখে বিষাদ। সকাল বেলা সূর্যের কিরণ দেখার পরে রবীন্দ্রনাথের মন আর বিষাদের অন্ধকারে থাকতে চাইল না। সংকীর্ণ স্বার্থের গণ্ডি পার হয়ে তার মন বৃহৎ এর সীমায় পৌঁছে চাইল।
জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন পাওয়ার জন্য মন অস্থির হলো। তিনি নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চাইলেন। মনের মধ্যে প্রভাতপাখির গান পৌঁছানো মাত্র রবীন্দ্রনাথের কবি মন উদ্দাম আবেগে 'হেথায় হোথায় পাগলের প্রায়' যাত্রা শুরু করল।
চলার পথে অনেক বাধার সম্মুখীন হলেন কবি। ইচ্ছা শক্তির জোরে তিনি সব বাধা অতিক্রম করে পাগলের মত সারা পৃথিবী জুড়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। বিধাতা নিষ্ঠুর, তিনি চতুর্দিকে দিকে বাধা তৈরি করে রেখেছেন। কবি সেই বাধা ভেঙে এগিয়ে চললেন। তিনি লিখেছেন,
" ভাঙ্ রে হৃদয়, ভাঙরে বাঁধন,
সাধ রে আজিকে প্রাণের সাধন"।
প্রাণের সাধনা করার জন্য বাঁধন ভেঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। বিধাতা নিজে অসীম হলেও মানুষকে তিনি ছোট গণ্ডিতে আবদ্ধ করে রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ এই ক্ষুদ্র কারাগারে আবদ্ধ থাকতে চান না। পৃথিবীর কোন অন্ধকার আর কবির মনকে বেঁধে রাখতে পারবে না। তিনি কোন জাগতিক বাধাকে আর ভয় করেন না। মনের বাসনা প্রবল হলে সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করা যায়। কবিতায় আছে,
"আমি ঢালিব করুণাধারা
আমি ভাঙিব পাষাণকারা
আমি জগৎ প্লাবিয়া বেড়াব গাহিয়া
আকুল পাগল-পারা।"
কবি ক্ষুদ্র জীবনের গণ্ডিকে অতিক্রম করে বৃহৎ এর সাথে মেলার জন্য আকুল হয়েছেন। তাই লিখেছেন,
"কেশ এলাইয়া, ফুল কুড়াইয়া
রামধনু-আঁকা পাখা উড়াইয়া
রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া
দিব রে পরান ঢালি।"
রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমস্ত মন প্রাণ বিপুলা পৃথিবী সমস্ত কিছুর মধ্যে উজার করে দিতে চান। ঝরনার ছুটে চলার মত তার আবেগ বাঁধনহারা হয়েছে।
" এত কথা আছে, এত গান আছে, এত প্রাণ আছে মোর,
এত সুখ আছে, এত সাধ আছে, প্রাণ হয়ে আছে ভোর। "
প্রভাত কালে সূর্যের কিরণ কবির মনের আবেগকে জাগিয়ে তুলেছে। তখন তিনি মহাসাগরের গান শুনতে পেয়েছেন। তিনি আর অন্ধকারের কারাগারে বন্দী থাকতে চান না। কারাগার ভেঙে তিনি বেরিয়ে আসবেন-
" ভাঙ্ ভাঙ্ ভাঙ্ কারা, আঘাতে আঘাত কর। "
কবি তাঁর কাব্যের করুনাধারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চান। নদী যেমন পর্বত শৃঙ্গ থেকে সৃষ্টি হয়ে দুকূল প্লাবিত করে বয়ে চলে, মনের আবেগ তেমনি সবকিছু ভাসিয়ে দিতে চায়। অন্য একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন,
"আমি রূপে তোমায় ভোলাবো না ভালোবাসায় ভোলাব
আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো, গান দিয়ে দ্বার খোলাব"।
গান দিয়ে দ্বার খোলানোর এই চেষ্টা রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য এবং গানে দেখতে পাওয়া যায়।
Related Tags:
nirjharer swapnabhanga poem
nirjharer swapnabhanga lyrics
nirjharer swapnabhanga poem in bengali pdf
nirjharer swapnabhanga poem lyrics
nirjharer swapnabhanga poem by rabindranath tagore
nirjharer swapnabhanga poem meaning
nirjharer swapnabhanga translation
nirjharer swapnabhanga dance
nirjharer swapnabhanga poem
rabindranath tagore nirjharer swapnabhanga
nirjharer swapnabhanga
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam links in the comment box.