ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংক্ষিপ্ত জীবনী Iswar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali
![]() |
Iswar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali |
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিগত শতকের একটি প্রকাণ্ড বিস্ময় রূপে আমাদের কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি সংস্কৃত পণ্ডিত হওয়া সত্বেও ইংরেজি ভাষাতে সুনিপুণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। আধুনিক শিক্ষা এবং স্ত্রী শিক্ষার প্রসারে তার অবদান আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
ধর্মীয় আচার-আচরণে তার বিশেষ উৎসাহ ছিল না, তিনি মানবধর্মে বিশ্বাস করতেন। বাঙালি জাতিকে তিনি মানবপ্রেম শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং গদ্যকার। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য 1839 খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজ তাকে বিদ্যাসাগর উপাধি দান করেছিল।
তিনি বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার। রবীন্দ্রনাথ তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলেছিলেন। নারীমুক্তি আন্দোলনে তার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করতে হয়।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
1820 খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অবশ্য তখন বীরসিংহ গ্রাম হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ঈশ্বরচন্দ্রের পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ভগবতী দেবী। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আসল নাম ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামে স্বাক্ষর করতেন।
1891 খ্রিস্টাব্দে তিনি পরলোকে গমন করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষাজীবন:
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 4 বছর 9 মাস বয়সে সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। এরপরে আট বছর বয়সে তিনি কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পাঠশালাতে ভর্তি হন। এরপর 1828 সালে তিনি পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন।
1829 সালে তিনি সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রখ্যাত বাংলা সাহিত্যিক মোহন তর্কালঙ্কার তার সহপাঠী ছিলেন। 1830 খ্রিস্টাব্দে তিনি সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন।
এই সময় তিনি সরকারি বৃত্তি লাভ করেছিলেন। একই সঙ্গে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষাতে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে তার নামের সঙ্গে বিদ্যাসাগর উপাধি যুক্ত হয়। সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপকগণ তাকে বিদ্যাসাগর নাম দিয়েছিলেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কর্মজীবন:
1841 খ্রিস্টাব্দে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান পন্ডিত হন। 1846 খ্রিস্টাব্দে ইনি সংস্কৃত কলেজের সহকারি সম্পাদক হয়ে ওঠেন। 1847 খ্রিস্টাব্দে তিনি সংস্কৃত কলেজের সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
1853 খ্রিস্টাব্দে তিনি বীরসিংহ গ্রামে অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। তার বহু বিচিত্র কর্মকাণ্ড সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি ছিলেন একজন কর্মযোগী মানুষ।
বাংলা গদ্যসাহিত্যে, সমাজে, শিক্ষাক্ষেত্রে ও নারীশিক্ষার প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা:
নারীশিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগরের অবদান:
বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগর ছিলেন পথিকৃৎ। তিনি বুঝেছিলেন, নারী জাতির উন্নতি না ঘটলে বাংলা তথা ভারতের প্রকৃত উন্নতি হবে না। তাই তিনি ড্রিংকওয়াটার বিটনের সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতাতে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে এটি প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। এই স্কুলটি এখন বেথুন স্কুল নামে পরিচিত। 1857 খ্রিস্টাব্দে তিনি বর্ধমান জেলায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। গ্রামগঞ্জে মেয়েদের মধ্যে যাতে শিক্ষা বিস্তার হয় সেজন্য তিনি বঙ্গদেশের বিভিন্ন জেলায় স্ত্রীশিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
1858 খ্রিস্টাব্দে মে মাসে নদিয়া জেলা, বর্ধমান জেলা, হুগলি জেলা ও মেদিনীপুর জেলায় 35টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে প্রায় 1300 জন বালিকা পড়াশোনা করত। পরবর্তীকালে এই বিদ্যালয়ের সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় 288টি।
এখন বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত সে সময়ে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন তিনি 1872 খ্রিস্টাব্দে তৈরি করেছিলেন। এছাড়া নিজের গ্রাম বীরসিংহতে তিনি মায়ের স্মৃতিতে ভগবতী বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন:
বিদ্যাসাগর ছিলেন সংস্কারমুক্ত মনের মানুষ। সংস্কৃতে পন্ডিত মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে উদার মনে গ্রহণ করেছিলেন। হিন্দু বিধবাদের দুঃখ দূর করার জন্য তিনি জীবন পণ রেখে লড়াই করেছিলেন।
তার আন্দোলনের ফলে ইংরেজ সরকার 1856 খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহ আইনকে কার্যকর করেছিলেন। এমনকি বিদ্যাসাগর তার পুত্র নারায়নচন্দ্রের সঙ্গে এক বিধবা নারীর বিবাহ দিয়েছিলেন।
বাংলা গদ্য সাহিত্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান:
বিদ্যাসাগরের পূর্ব কাল থেকে বাংলা গদ্যের প্রচলন ছিল। কিন্তু রুচিসম্মত বাংলা গদ্যের স্রষ্টা বিদ্যাসাগর। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অধিকাংশ রচনা অনুবাদমূলক।
1847 খ্রিস্টাব্দের পূর্বে তিনি ভাগবতের কৃষ্ণলীলা অবলম্বনে 'বাসুদেব চরিত' গ্রন্থ লিখেছিলেন। কিন্তু এই গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি এবং গ্রন্থটি মুদ্রিত হয়নি।
হিন্দি গ্রন্থ 'বৈতাল পচ্চীসী' তিনি 'বেতাল পঞ্চবিংশতি' নামে অনুবাদ করেছিলেন। কালিদাসের 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম' বাংলা অনুবাদ করেছিলেন ' শকুন্তলা' নামে।
তার লেখা 'সীতার বনবাস' গ্রন্থটি ভবভূতির উত্তরচরিত এবং বাল্মীকির রামায়ণের উত্তরখণ্ডের আখ্যান অনুসরণে লেখা। শেক্সপিয়রের কমেডি অফ এররস গ্রন্থের অনুবাদ করেছিলেন 'ভ্রান্তিবিলাস' নামে।
এগুলি হল বিদ্যাসাগরের লেখা বিশুদ্ধ সাহিত্য গ্রন্থের অনুবাদ।
তিনি কয়েকটি পাঠ্য গ্রন্থের অনুবাদ করেছিলেন। যেমন- মার্শম্যানের 'হিস্টরি অফ বেঙ্গল' গ্রন্থের অনুবাদ করেছিলেন 'বাঙ্গালার ইতিহাস' নামে। চেম্বার্সের বায়োগ্রাফিস ও রুদিমেন্টস অফ নলেজ গ্রন্থ দুটি অনুবাদ করেছিলেন ' জীবনচরিত' ও 'বোধোদয়' নামে। ঈশপের ফেবেলস অবলম্বনে লিখেছিলেন 'কথামালা'।
তার অনুবাদ গ্রন্থগুলি ক্লাসিক সাহিত্য হয়ে উঠেছে। অনুবাদ গ্রন্থে তিনি বাঙালিয়ানার ছাপ রেখেছেন।
অনুবাদ গ্রন্থ ছাড়া তার মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা কম নয়। তার লেখা 'সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য শাস্ত্র বিষয়ক প্রস্তাব' বাঙালির লেখা প্রথম সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস।
বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে তিনি লিখেছিলেন 'বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব' এবং বহু বিবাহের বিপক্ষে লিখেছিলেন 'বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার'।
তিনি নিজের জীবন সম্পর্কে লিখেছিলেন 'বিদ্যাসাগরচরিত'। এটি তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। তিনি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় সাহিত্যকর্মে যথার্থ মনোযোগ দিতে পারেননি।
তার এক বন্ধুর বালিকা কন্যা প্রভাবতীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লিখেছিলেন 'প্রভাবতী সম্ভাষণ'।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছদ্মনামে কয়েকটি গ্রন্থ লিখেছিলেন। এই গ্রন্থগুলিতে তিনি ব্যঙ্গ বিদ্রুপ এর মধ্য দিয়ে সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য' ছদ্মনামে লিখেছিলেন 'অতি অল্প হইল', 'আবার অতি অল্প হইল' এবং 'ব্রজবিলাস'।
'রত্নপরীক্ষা' গ্রন্থটি লিখেছিলেন 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপো সহচরস্য' ছদ্মনামে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদান:
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যে যতি সন্নিবেশ করেছিলেন, গদ্যের ভাষাকে সরস করেছিলেন। বাংলা গদ্যের মধ্যে ধ্বনির ঝংকার এবং সুরের বিন্যাস ঘটানো সম্ভব তা প্রমাণ করেছিলেন তিনি।
তার পরবর্তী বাংলা সাহিত্য তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আসছে। বর্তমানে বাংলা গদ্য সাহিত্য অনেক উন্নতি লাভ করলেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যে পদান্বয় ও যতিবন্ধন রীতি প্রচলন করেছিলেন তা এখনো মেনে চলি আমরা।
এই ব্লগে আপনি কি পেতে পারেন ? এই ব্লগ কাদের জন্য? How will this Blog help you? What will you get from this Blog?
এই ব্লগটি মূলত ছাত্র ছাত্রীদের জন্য। পঞ্চম শ্রেণী থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পরীক্ষা, একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, বাংলা অনার্স, বাংলা মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত সমস্ত শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে র মূল্যবান নোটস এই ব্লগে পাওয়া যাবে । এই ব্লগে আপনি পাবেন class 10 Bengali book pdf, class 10 Bengali question answer, CBSE class 10 Bengali guide book pdf, class 10 Bengali answer, class 10 Bengali syllabus, class 10 Bengali question answer, CBSE class 10 Bengali guide book pdf free download, CBSE class 10 Bengali guide book pdf, class 10 Bengali syllabus, class 10 Bengali question answer 2022, class 10 Bengali book pdf. বাংলা sahitya sanchayan class 10 bengali,sahitya sanchayan class 10 bengali বই থেকে সমস্ত রকমের নোটস আপনাকে Madhyamik/ Class 10th পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেতে সাহায্য করবে । যে সব ছাত্র ছাত্রী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন, একাদশ শ্রেণীতে পড়ছেন, তাদের জন্য এই ব্লগ বিশেষভাবে উপযোগী। এই ব্লগে আছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রয়জনীয় বাংলা নোটস এর বিপুল সম্ভার। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য আমি তৈরি করেছি : hs bengali suggestion 2021 pdf download, bangla suggestion 2021 - 2022, bengali suggestion 2021-2022 hs, hs bengali question answer, hs bengali question 2021 - 2022, class 12 bengali suggestion 2021 / 2022 pdf, hs bengali syllabus 2021 - 2022, hs bengali notes, bangla suggestion, hs bengali question answer. একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের জন্য আমি আমার বিশেষ প্রয়াস class 11 Bengali notes pdf download, class 11 Bengali notes, class xi Bengali suggestion pdf, class 11 Bengali question paper. যারা বাংলা বিষয়ে অনার্স Bengali Honours করছেন , তারাও প্রয়োজনীয় সমস্ত নোটস পাবেন। পঞ্চম শ্রেণী Class v / 5 থে কে নবম শ্রে ণী Class ix / 9 পর্যন্ত সমস্ত ক্লাসের বাংলা বই এর প্রশ্ন উত্তর এখানে পাবেন। টেক্সট বই text book থেকে সব উত্তর আছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam links in the comment box.