নবম শ্রেণি
মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক 3
বিষয়: বাংলা
শিক্ষাবর্ষ: 2021
নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখ: Class 9 Model Activity Task Bengali Part 3:
প্রশ্ন 1: 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে লেখক সংস্কৃত ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল বলেছেন কেন? বর্তমান যুগে ইংরেজি ও বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয় কেন?
উত্তর: বহুভাষাবিদ প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে সংস্কৃত ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলেছেন।
ভারতবর্ষে যতগুলো ভাষা প্রচলিত আছে তার মধ্যে সংস্কৃত ভাষা একটি অত্যন্ত প্রাচীন ভাষা। সংস্কৃত ভাষা আত্মনির্ভরশীল অর্থাৎ স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা। প্রাচীন কালের সমস্ত ভাষা সংস্কৃতের মতই স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা। যেমন- হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা এবং আরবি ভাষা। কোনো নতুন চিন্তা বা কোনো নতুন বস্তুর নামকরণের জন্য নতুন শব্দের প্রয়োজন হলে সংস্কৃত ভাষা অন্য কোন ভাষার কাছ থেকে কোনো শব্দ বা পদ ধার করে না। সংস্কৃত শব্দ ভান্ডারে বা সংস্কৃতে প্রচলিত ধাতুর ভান্ডারে খোঁজ নেয়। এরপরে প্রচলিত শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় বিভক্তি ইত্যাদি যোগ করে নতুন শব্দ বা পদ তৈরি করা হয়। নতুন শব্দ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সংস্কৃত ভাষার তুলনা নেই। সংস্কৃত ভাষায় অনেক ধাতু এবং শব্দ আছে যেগুলি সামান্য অদল বদল করে এবং প্রত্যয়, সমাস ইত্যাদি যোগ করে অসংখ্য নতুন শব্দ তৈরি করা যায়। তাই প্রাবন্ধিক সংস্কৃত ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলেছেন।
বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়। বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার শব্দ ভান্ডারে একাধিক বিদেশি শব্দ এবং প্রাদেশিক শব্দ মিশে আছে। বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায় বর্তমান সময়ে সমস্ত বস্তুর নাম প্রকাশ করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি ভাবে আইন-আদালত বা বিজ্ঞান গ্রন্থের সবকিছুকে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় অন্য ভাষার শব্দের। ইংরেজির ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য। বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার শব্দভাণ্ডারে অসংখ্য বিদেশি শব্দ মিশে আছে এবং থাকবে। তাই বাংলা ও ইংরেজি ভাষাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা বলা যায় না।
প্রশ্ন 2: 'এরই মাঝে বাংলার প্রাণ'- বাংলার প্রাণস্পন্দন কবি কিভাবে উপলব্ধি করেছেন?
উত্তর: আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ 'রূপসী বাংলা' কাব্যের 'আকাশে সাতটি তারা' কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতির মধ্যে এবং অতি সাধারণ দৃশ্য ও ভাবনার মধ্যে বাংলার প্রাণকে অনুভব করেছেন। সন্ধ্যার তরল অন্ধকার যখন পৃথিবীকে আলিঙ্গন করে এবং আকাশে সাতটি তারা ফুটে ওঠে তখন ঘাসের উপরে বসে থেকে কবি বাংলার সামগ্রিক রূপ প্রত্যক্ষ করেন। সন্ধ্যার আকাশে পশ্চিম দিগন্তে টুকরো টুকরো মেঘে সূর্যের রক্তিম আলো যেন এক অসাধারণ মায়া সৃষ্টি করে। এই রাঙা মেঘকে কবি বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাওয়া মৃত মনিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এরপরে অন্ধকার আরো ঘন হয়েছে। সুন্দরী কেশবতী সন্ধ্যা যেন পরম মমতায় সমগ্র প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করেছে। মনের মাধুরী মিশিয়ে কবি প্রকৃতিকে এবং সন্ধ্যাকে জীবন্ত করে তুলেছেন। নরম ধানের গন্ধ, কলমির ঘ্রান, পুকুরের জলের গন্ধ, চাঁদা সরপুঁটিদের আঁশটে গন্ধ, কিশোরের পায়ে দলা মুথা ঘাস, কিশোরীর চাল ধোয়া ভিজে হাত, বটফলের গন্ধ- এই সবকিছুর মধ্যে কবি বাংলার প্রাণ স্পন্দন অনুভব করেছেন।
প্রশ্ন 3: 'চিঠি' রচনা অবলম্বনে স্বামী বিবেকানন্দের স্বদেশ ভাবনা পরিচয় দাও।
উত্তর: স্বামী বিবেকানন্দের 'চিঠি' প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে তাঁর স্বদেশ ভাবনার পরিচয় পাই। তিনি ভারতের নারী সমাজের উন্নতির জন্য মিস নোবেলকে নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন। অবশ্য তিনি মিস নোবেলকে প্রলুব্ধ করেন নি, বরং তিনি যাতে ভারতকে যথাযথভাবে চিনতে পারেন এবং ভারতের সেবায় স্বেচ্ছায় আত্মনিয়োগ করতে পারেন, সেই নির্দেশিকা দিয়েছেন। দরিদ্র অবহেলিত ভারতবাসীর জন্য বিবেকানন্দের দরদ প্রকাশ পেয়েছে। ভারতবাসীর উন্নতিসাধন করতে হলে, যথার্থ সেবাপরায়ণ হতে হবে। মিস নোবেলকে লেখা এই চিঠির ছত্রে ছত্রে দেশবাসীর প্রতি বিবেকানন্দের অকুণ্ঠ ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন ভারতবাসীর সর্বার্থ মঙ্গল। তাই মিস নোবেলকে তিনি সাবধান করে বলেছিলেন, তিনি যেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ভারতে আসেন। ভারতবাসীর মঙ্গল সাধন করতে হলে প্রথমে তাদের ভালবাসতে হবে। সেই ভালবাসার প্রকাশ আনন্দের এই চিঠিতে আছে। সমগ্র প্রবন্ধটি বিবেকানন্দের স্বদেশভাবনায় উজ্জল।
প্রশ্ন 4: 'যা গিয়ে ওই উঠোনে তোর দাঁড়া'- কবি কাদের, কেন এই পরামর্শ দিয়েছেন? কবিতার নামকরণের সঙ্গে উদ্ধৃতিটি কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?
উত্তর: আধুনিক কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নবীনকে প্রত্যন্ত গ্রামে উঠানে লাউমাচার পাশে দাঁড়াতে বলেছেন।
লাউমাচার পাশে দাঁড়ালে গ্রাম বাংলার আবহমানতা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী 'আবহমান' কবিতায় পল্লীবাংলার চিরন্তন রূপটি প্রকাশ করেছেন। অতি সামান্য লাউ গাছের প্রতীকে তিনি বাংলার আবহমান কালকে উপস্থাপন করেছেন। উঠানে লাউমাচা গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত। সুদীর্ঘ পরম্পরায় বাড়ির উঠোনে লাউমাচার অবস্থান। এই লাউ মাচা যেন অনাদিকালের স্মৃতিকে জাগ্রত করে তোলে। সন্ধ্যার বাতাসে লাউলতা দোল খায়। এই দৃশ্য আবহমানকালের। পল্লী বাংলাকে জানতে হলে অতি সাধারন প্রকৃতিকে ভালোভাবে চিনতে হবে। প্রকৃতির সৌন্দর্য কেবল বৃহৎ এর মধ্যে অবস্থিত হয় না, নগণ্য লাউ মাচা প্রকৃতির সৌন্দর্যের অনন্য আধার। কোনো এক কালে কোন পূর্বপুরুষ এই গ্রামে ঘর বেধে ছিল। তাদের উঠানে ছিল লাউ মাচা। সুখে-দুঃখে তারা সন্ধ্যার বাতাসে মেতে উঠেছিল। সেদিনের সেই মানুষ আজ আর নেই। কিন্তু তাদের অস্তিত্ব তাদের বংশধারায় মিশে আছে। লাউ মাচা যেন সেই সুদীর্ঘকালের গল্প বলে। তাই কবিতার নাম 'আবহমান' এর সঙ্গে প্রশ্নে উদ্ধৃত চরণটির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
প্রশ্ন 5: 'অগত্যা রাধারানী কাঁদিতে কাঁদিতে ফিরিল'- রাধারানীর কান্নার কারণ কী?
উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'রাধারানী' গল্প থেকে প্রশ্ন উদ্ধৃত লাইনটি নেওয়া হয়েছে। কিশোরী রাধারানী মাহেশের রথের মেলায় গিয়েছিল ফুলের মালা বিক্রি করার জন্য। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে রথের দড়িতে অর্ধেক টান পড়তে না পড়তেই মেলা ভেঙে যায়। রাধারানী ভেবেছিল বৃষ্টি থামলে আবার লোক সমাগম ঘটবে। কিন্তু বৃথা প্রতীক্ষা করে সন্ধ্যার সময় পর্যন্ত একটি মালাও বিক্রি করতে না পেরে রাধারানী হতাশ হয়েছিল। অসুস্থ মায়ের পথ্য কেনার জন্য তার টাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মালা বিক্রি করতে না পারায় তার অর্থের সংস্থান হয়নি। তাই রাধারানী কাঁদতে শুরু করেছিল। মায়ের পথ্য না নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে, এই ভাবনায় কাতর হয়ে রাধারানী কাঁদছিল এবং ভারাক্রান্ত মনে কর্দমাক্ত পথ দিয়ে ফিরে আসছিল।
।। সমাপ্ত।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam links in the comment box.