Footer Logo

২০২১/০৬/১৮

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন যুগ শিবায়ন কাব্যধারা Bangla Sahityer Itihas Shivayan Kavyadhara

  BAIRAGYA SHIKSHA NIKETAN       ২০২১/০৬/১৮

 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন যুগ শিবায়ন কাব্যধারা Bangla Sahityer Itihas Shivayan Kavyadhara

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে দেব-দেবীর মহিমা ঘোষণায় উচ্চকিত । দেবতার পূজা প্রচার ছিল এই সময়ের কাব্যের অন্যতম প্রধান উপজীব্য । পূজা প্রচারের জন্য মঙ্গলকাব্যের দেব দেবীরা কখনো ভয়, কখনো সাহায্যের পসরা নিয়ে মানুষের দরবারে হাজির হয়েছেন ।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন যুগ শিবায়ন কাব্যধারা Bangla Sahityer Itihas Shivayan Kavyadhara
 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন যুগ শিবায়ন কাব্যধারা Bangla Sahityer Itihas Shivayan Kavyadhara


এই সময়পর্বেই পৌরাণিক দেবতা শিবের কিছুটা স্থূল, লোকায়ত রূপ কল্পনা করে এক জাতীয় কাব্য লেখা হয়েছিল, যেখানে পূজা প্রাপ্তির অভিলাষে দেবতা কর্তৃক মানুষকে ভয় প্রদর্শন বা প্রলোভন দেখানোর বর্ণনা পাই না; বরং হর-পার্বতী সংসার জীবনের বর্ণনা অনেকটা মঙ্গলকাব্যের ধাঁচে বর্ণিত হয়েছে ।

শিব এখানে কৃষিজীবী ও ভোগ পরায়ন গৃহী । এই ধরনের কাব্যকে শিবায়ন কাব্য বলা হয় । পণ্ডিতদের মতে, শিবায়নের শিব চরিত্রটির মূল আছে বৈদিক দেবতা রুদ্রের মধ্যে । কারো মতে, দ্রাবিড় সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটেছে । বস্তুত, শিবায়নের শিব এক মিশ্র দেবতা ।

শংকর কবিচন্দ্র 

শংকর কবিচন্দ্র সপ্তদশ শতকের শিবায়ন কাব্য ধারায় স্মরণীয় হয়ে আছেন । বিষ্ণুপুরের ব্রাহ্মণ বংশে তাঁর জন্ম । তাঁর শিবায়ন কাব্যের সম্পূর্ণ পুথি পাওয়া যায়নি । তবে, মৎস্য ধরা পালা ও মাখনলাল মুখোপাধ্যায় উল্লিখিত শঙ্খ পড়া পালাটি তাঁর রচনা বলে জানা যায় । মৎস্য ধরা পাঠটি শিবায়নের লোকপ্রচলিত কাহিনীর প্রথম লিখিত রূপ মনে হয় । ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি শিবায়ন রচনা করেছিলেন । উল্লিখিত পালাদুটিতে শ্রীকবি শংকর, কবি শংকর, কবিচন্দ্র প্রভৃতি ভনিতা পাওয়া গেছে । কিষান ও জালিক শিবের চরিত্র বর্ণনায় কবি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ।

রামকৃষ্ণ রায়

সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগে রামকৃষ্ণ রায় শিব বিষয়ক নানা পৌরাণিক আর লৌকিক আখ্যান অবলম্বনে সুবৃহৎ শিবমঙ্গল কাব্য রচনা করেন । বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে শিব প্রসঙ্গের এমন নিপুণ সংকলন বাংলা সাহিত্যে আর নেই । তাই এই গ্রন্থকে শিব বিষয়ক কোষগ্রন্থ বলা হয় । রামকৃষ্ণ শিবায়ন কাব্যে শিবের পৌরাণিক মহিমা বর্ণনাতেই আবদ্ধ থাকতে চেয়েছেন । মাত্র একটি পালায় শিবের লোকায়ত বর্ণনা আছে । মঙ্গলকাব্যকে গ্রাম্যতা বিমুক্ত করে পুরাণের সীমায় উত্তীর্ণ করতে চেয়েছিলেন তিনি । রামকৃষ্ণের নিবাস হাওড়া জেলার রসপুর গ্রামে ।

কবির পিতামহ জয়চন্দ্র পাঠান আমলে ‘রায়’ উপাধি লাভ করেছিলেন । গ্রন্থের ভাষা মার্জিত,  চরিত্রের পারম্পর্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে রামকৃষ্ণের শিবমঙ্গল প্রশংসনীয় । পৌরাণিক ঐতিহ্যের প্রতি অনুগত থাকার কারণে ও আদিরসের ব্যবহার না থাকার কারণে রামকৃষ্ণের কাব্য জনপ্রিয় হয়নি । দীনেশচন্দ্র সেন ও আশুতোষ ভট্টাচার্যের উদ্যোগে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে রামকৃষ্ণের কাব্য প্রকাশিত হয়েছে । 

রামেশ্বর ভট্টাচার্য

রামেশ্বর ভট্টাচার্য শিবায়ন কাব্য ধারার সবচেয়ে খ্যাতিমান কবি । রামেশ্বর ভট্টাচার্য শিবায়ন ছাড়া সত্যপীরের পাঁচালির রচয়িতা ।মেদিনীপুরের ঘাটালের অন্তর্গত যোধপুর গ্রামের শান্ডিল্য গোত্র উদ্ভূত বন্দোপাধ্যায় বংশে জন্ম হয় তাঁর । যজন-যাজন এর জন্য ভট্টাচার্য পদবী গ্রহণ করেন । ডক্টর পঞ্চানন চক্রবর্তীর মতে কবির জন্ম ১৬৭৭ খ্রিস্টাব্দে ও মৃত্যু ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে ।

রামেশ্বরের উপাধি ছিল কবি-কেশরী । তাঁর শিবকীর্তন কাব্যে সাতটি পালা আছে । প্রথম থেকে তৃতীয় পালার মাঝামাঝি পর্যন্ত পৌরাণিক কাহিনীর প্রাধান্য । প্রকাশক পঞ্চানন চক্রবর্তীর মতে পুরান কাব্যের বিশেষ বৈচিত্র নাই । কিন্তু, লৌকিক অংশে শিবের গার্হস্থ্য জীবন, দারিদ্র, কলহ প্রভৃতি বর্ণনা বাস্তবানুগ হয়েছে । তবে কাব্যটি সর্বদা স্নিগ্ধ নয় । মনে হয়, কাব্যটি অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে লেখা হয়েছিল।

মৃগলুব্ধ

 শিবায়ন কাব্যের দুটি ধারা; একটি শিবায়ন ও অন্যটি মৃগলুব্ধ উপাখ্যান । মৃগলুব্ধ কাব্যের সংখ্যা দুটি- একটি দ্বিজ রতিদেবের ‘মৃগলুব্ধ’, অন্যটি রামরাজার ‘মৃগলুব্ধ সংবাদ’। আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ ১৩২২ বঙ্গাব্দে কাব্যদুটি প্রকাশ করেন । রতিদেব চট্টগ্রামের সুচক্রদণ্ডী গ্রামে ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন । কাব্যে আছে-

“রস অংক বাউ শশী শাকের সময় ।

তুলা মাসে সপ্তবিংশতি গুরুবার হএ ।।”

অর্থাৎ, ১৫৯৬ শকে বা ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে রতিদেবের কাব্য লেখা হয়েছিল ।

সুকুমার সেনের মতে, রামরাজার প্রকৃত নাম শিশুরাম রায় । করিম সাহিত্যবিশারদের মতে কবি মগ বংশের মানুষ । রতিদেবের কাব্যের সাথে রামরাজার কাব্যের অনেক মিল আছে ।  কবি ভনিতায় লিখেছেন, “শংকর কিংকর রামরাজা” । মৃগলুব্ধ আখ্যানকাব্য বিচারে বিশেষ উল্লেখযোগ্য নয় । শিবকাহিনী একমাত্র শিবায়ন কাব্যেই সাহিত্যগুণ সম্পন্ন হয়েছে । অষ্টাদশ শতকের পরবর্তী সময়ে আর কোন শিবায়ন কাব্য লেখা হয়নি ।

ঋণ স্বীকার- অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় .

বাংলা সাহিত্য আলোচনা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন যুগ


logoblog

Thanks for reading বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন যুগ শিবায়ন কাব্যধারা Bangla Sahityer Itihas Shivayan Kavyadhara

Previous
« Prev Post

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam links in the comment box.