প্রশ্ন: দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের সংলাপ রচনার বৈশিষ্ট্য লেখ।
![]() |
Dialogue in Nildarpan by Dinabandhu Mitra |
হরচন্দ্র ঘোষ, রামনারায়ণ তর্করত্ন প্রমূখ নাট্যকারগণ তখন খুবই জনপ্রিয় ছিলেন।
কালীপ্রসন্ন সিংহের দুটি নাটক এসময় বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হয়েছিল।
সবচেয়ে বড় কথা, তখনো পর্যন্ত জাতীয় রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং মধুসূদন দত্ত এসে পৌঁছাননি তাঁর সংলাপ সম্পর্কিত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ চিঠিগুলি নিয়ে।
এসব ইতিহাসের উল্লেখ একারণে যে, নীলদর্পণ নাটকের সংলাপ রচনা পূর্ণ দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়েছিল। ফলে এর সংলাপের ব্যর্থতা ও সার্থকতা দুইয়েরই দায়িত্ব তাঁর।
দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের সংলাপ রচনার বৈশিষ্ট্য (Dialogue in Nildarpan by Dinabandhu Mitra)
‘সধবার একাদশী’ বা ‘বিয়েপাগলা বুড়ো’ জাতীয় প্রহসনে তিনি যে ধরনের চরিত্র নির্মাণ করেছেন তা কিঞ্চিৎ বাস্তব; কিন্তু ‘নীলদর্পণ’ নাটকের সংলাপ রচনা ক্ষেত্রে তার অনেকটা দ্বিধা ছিল।
তা হল, ভদ্র ও শিক্ষিত ব্যক্তির সংলাপের সাথে ভদ্রেতর অশিক্ষিত ব্যক্তির সংলাপ সমধর্মী হবে কিনা, এই প্রশ্নে লেখক কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিলেন।
বলা প্রয়োজন, ভদ্র চরিত্রগুলি যে ভাষায় কথা বলে, ভদ্রেতর চরিত্র গুলি সে ভাষায় কথা বলে না। এর ফলে প্রথম ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সার্থকতা লাভ করেছেন তিনি।
তাঁর সংলাপ রচনার মধ্যে বাস্তব-রস অনুসৃত হয়েছে বারবার।বঙ্কিমচন্দ্র এর সম্পর্কে বলেছেন- “ যে ঘটনা ও মানুষগুলো সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ ছিল সেখানে তিনি সফল হয়েছেন।
আর যে ঘটনা ও মানুষগুলো সম্পর্কে দীনবন্ধুর কোনো প্রত্যক্ষ যোগ দিলো না সেখানে তাকে মনগড়া কল্পনাশ্রয়ী সংলাপের সাহায্য নিতে হয়েছে ।” ফলে চেনা মানুষগুলো যখন তার সাহিত্যে উঠে এসেছে সেগুলি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত ভাবে এসেছে।
এমনকি তাদের মুখের ভাষাটিও অপরিবর্তিতভাবে হাজির করেছেন লেখক। যেমন- তোরাপ, আদুরী, ক্ষেত্রমনি, রেবতী ইত্যাদির ক্ষেত্রে তাদের সংলাপ তাদের চরিত্রগুলিকে চিনিয়ে দেয়।
অন্যদিকে, ভদ্র চরিত্রের সংলাপে তিনি প্রচলিত সাহিত্যাদর্শের আশ্রয় নিয়েছেন।
তাই, নবীনমাধব, গোলক বসু, সরলতা, সৈরিন্ধ্রী- প্রায় আলংকারিক সংস্কৃতপন্থী ভাষায় কথা বলে যে নাটকের বিচারে হাস্যকর।
বঙ্কিমচন্দ্র প্রদত্ত নাটকের সংলাপ রচনার সূত্রটি থেকে বোঝা যায় যে,সংলাপে বাস্তবতার চর্চা সাধারণত দুইমুখী সাফল্য আনে।
প্রথমত, সংলাপ চরিত্রের ন্যায় রক্ষা করে; দ্বিতীয়তঃ চরিত্রগুলির শ্রেণীকে স্পষ্ট করে। নাটক যেহেতু দ্বন্দ্ব-প্রাণএবং সেই দ্বন্দ্ব যেহেতু চরিত্রের অগ্রগতির নিরিখে বিচার্য, তাই সংলাপ খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। সংলাপে প্রখর তাৎপর্য নাটকের দ্বন্দ্বের অগ্রগতি হয়।
প্রাচীন যুগে বাংলা নাটকে সংস্কৃত নাটকের মত দীর্ঘ কাব্যবন্দি উচ্ছ্বাসময় সংলাপ ,ঘনঘন স্বগতোক্তি, কবিতার উদ্ধৃতি, আবেগের বাড়াবাড়ি সেইসব সংলাপকে সুখপাঠ্য করলেও নাটকীয় গতিকে ব্যাহত করতো।
মধুসূদন সর্বপ্রথম এ ব্যাপারে সচেতন হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর একার প্রচেষ্টায় ততটা পরিবর্তন হয়নি। ফলে, দিনোবন্ধু তার পূর্বসূরিদের মতই সংস্কৃত নাটকের আদর্শকে অনুসরণ করেছিলেন।
যেহেতু নাটকের বিষয়বস্তু সে যুগের এক জ্বলন্ত সমস্যাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, তাই এই শ্রেণীর সংলাপ নাট্য দ্বন্দ্বের সাথে যুক্ত হতে পারেনি।
চরিত্রের ন্যায় ও ইঙ্গিত সংলাপ থেকে পাই আমরা। ‘ সধবার একাদশী’র নিমচাঁদ যে ইঙ্গবঙ্গ সমাজের প্রতিনিধি তা তার ঘনঘন ইংরেজি কোটেশন প্রয়োগে বোঝা যায়।
অন্যদিকে, নীলদর্পণ এর আদুরী, পদীময়রানী, বা তোরাপ তাদের সংলাপের বাস্তবতায় তাদের শ্রেণীকে চিহ্নিত করে। অথচ এই বিষয়টি নাটকের চরিত্রের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
সাবিত্রী, সরলতা, সৈরিন্ধ্রী, নবীনমাধব, বিন্দুমাধব, এমনকি সাধারণ চাষী সাধুচরণও যেহেতু পাঠশালায় পড়েছে, তাই তারা সকলেই কৃত্রিম ভাষায় কথা বলে।
সংলাপ রচনা ক্ষেত্রে দুটি কৌশল অবলম্বন করা হয়- চরিত্রানুগ সংলাপ ও পরিবেশানুগ সংলাপ।প্রথম ক্ষেত্রে চরিত্রের বাস্তবতা ও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বক্তব্যের স্পষ্টতা লক্ষিত হয়।
দ্বিজেন্দ্রলাল, গিরিশচন্দ্র প্রমূখ প্রথম কৌশলটি এবং আংশিকভাবে মধুসূদন এবং সম্পূর্ণভাবে রবীন্দ্রনাথ এই দ্বিতীয় কৌশলটি গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু দীনবন্ধুর সময় এরকম সুচিন্তিত সংলাপ রচনার ধারা গড়ে ওঠেনি। তাই সংলাপ রচনায় তাঁর সাফল্য ও ব্যর্থতা দুই হয়েছে।
তাঁর ভদ্র চরিত্রগুলি অতিরিক্ত অলংকার সম্বলিত দীর্ঘ সংলাপ বলার ফলে যেমন চরিত্রের বাস্তবতা ক্ষুন্ন হয়েছে, তেমনি নাট্যরস ব্যাহত হয়েছে।
যেমন, সাধুচরণ-এর সংলাপ- “আহা বসে আছেন যেন গজেন্দ্রগামিনী”। কিংবা, সরলতার সংলাপ- “প্রাণেশ্বর! আমাদের নারীকুলে জন্ম, আমরা পাঁচ বয়স্যা একত্রে উদ্যানে যাইতে পারি না, আমরা নগর ভ্রমণে অক্ষম, আমাদিগের মঙ্গলসূচক সভা সংস্থাপন সম্ভবে না, আমাদিগের কালেজ নাই, কাছারি নাই, ব্রাহ্মসমাজ নাই।”
এ সংলাপ নিঃসন্দেহে কৃত্রিমতার চূড়ান্ত । আবার কখনো কাব্য সংলাপও প্রয়োগ করেছেন যেগুলি ভীষণভাবে অবাস্তব। যেমন, নবীন মাধব এর মৃতদেহ দেখে সৈরিন্ধ্রী বলেছেন-
“দাসীকে সঙ্গে লইয়া যাও তোমার দেবারাধনার পুষ্প তুলিয়া দেব ।
আহা মরি মরি একি সর্বনাশ।
সীতা ছেড়ে রাম বুঝি যায় বনবাস।।”
নাটকের শেষে বিন্দুমাধব যে দীর্ঘ কাব্য সংলাপ প্রয়োগ করেছেন তার বিন্দুমাত্র শিল্প সার্থকতা নাই । প্রকৃতপক্ষে ভদ্র চরিত্রের সংলাপ রচনা ক্ষেত্রে তিনি বাস্তবতার অনুসরণ করেননি ।
কিন্তু ভদ্রেতর চরিত্রগুলি কখনো কুৎসিত কুরুচিপূর্ণ সংলাপ ব্যবহার করেছে, এমনকি ইতর ভাষায় গালিগালাজ করেছে । কিন্তু সংলাপের অকৃত্রিমতায় সেগুলি হয়েছে সুন্দর। যেমন, তোরাপ যখন বলে-
“জাত মাল্লে পাদরি ধরে।
ভাত মাল্লে নীলবাঁদরে।।”
তখন এই কাব্য সংলাপই বিশেষ তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে। আদুরী যখন বলে,-
“সাহেবের কাছে কি মোরা যাতি পারি গন্দ ! থু থু পাঁজির গন্দ !”
তখন আচরণাত্মক অভিব্যক্তিমূলক নাট্য সংলাপ রচিত হয় সার্থকভাবে।
‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় বঙ্কিম দীনবন্ধু মিত্রের সাহিত্য রচনা আর মূল্যায়ন করে লিখেছেন, “তোরাপের সৃষ্টিকালে তোরাপ যে ভাষায় রাগ প্রকাশ করে তাহা বাদ দিতে পারতেন না, নিমচাঁদ গড়িবার সময় নিমচাঁদ যে ভাষায় মাতলামি করে তাহা ছাড়িতে পারিতেন না; ছাড়িলে ছেঁড়া তোরাপ ও কাটা নিমচাঁদ পাইতাম ।”
রুচির মুখ রক্ষা করতে গিয়ে দীনবন্ধু ছেঁড়া তোরাপ কাটা আদুরী ও ভাঙ্গা নিমচাঁদ দেননি- এখানেই তাঁর সার্থকতা।
তার এই ভদ্রেতর চরিত্রগুলির সংলাপ রচনার কৃতিত্ব পরবর্তীকালে বাংলা গণনাট্যকে প্রভাবিত করেছিল।
বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ বা তুলসী লাহিড়ীর ‘ছেঁড়াতার’ ইত্যাদি নাটকের বাঙালি কৃষকের সংলাপ দীনবন্ধুর আদর্শে কল্পিত। এখানেই বাস্তবানুগ সংলাপ রচনায় দীনবন্ধুর কৃতিত্ব ।
এই ব্লগে আপনি কি পেতে পারেন ? এই ব্লগ কাদের জন্য? How will this Blog help you? What will you get from this Blog?
এই ব্লগটি মূলত ছাত্র ছাত্রীদের জন্য। পঞ্চম শ্রেণী থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পরীক্ষা, একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, বাংলা অনার্স, বাংলা মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত সমস্ত শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে র মূল্যবান নোটস এই ব্লগে পাওয়া যাবে । এই ব্লগে আপনি পাবেন class 10 Bengali book pdf, class 10 Bengali question answer, CBSE class 10 Bengali guide book pdf, class 10 Bengali answer, class 10 Bengali syllabus, class 10 Bengali question answer, CBSE class 10 Bengali guide book pdf free download, CBSE class 10 Bengali guide book pdf, class 10 Bengali syllabus, class 10 Bengali question answer 2022, class 10 Bengali book pdf. বাংলা sahitya sanchayan class 10 bengali,sahitya sanchayan class 10 bengali বই থেকে সমস্ত রকমের নোটস আপনাকে Madhyamik/ Class 10th পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেতে সাহায্য করবে । যে সব ছাত্র ছাত্রী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন, একাদশ শ্রেণীতে পড়ছেন, তাদের জন্য এই ব্লগ বিশেষভাবে উপযোগী। এই ব্লগে আছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রয়জনীয় বাংলা নোটস এর বিপুল সম্ভার। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য আমি তৈরি করেছি : hs bengali suggestion 2021 pdf download, bangla suggestion 2021 - 2022, bengali suggestion 2021-2022 hs, hs bengali question answer, hs bengali question 2021 - 2022, class 12 bengali suggestion 2021 / 2022 pdf, hs bengali syllabus 2021 - 2022, hs bengali notes, bangla suggestion, hs bengali question answer. একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের জন্য আমি আমার বিশেষ প্রয়াস class 11 Bengali notes pdf download, class 11 Bengali notes, class xi Bengali suggestion pdf, class 11 Bengali question paper. যারা বাংলা বিষয়ে অনার্স Bengali Honours করছেন , তারাও প্রয়োজনীয় সমস্ত নোটস পাবেন। পঞ্চম শ্রেণী Class v / 5 থে কে নবম শ্রে ণী Class ix / 9 পর্যন্ত সমস্ত ক্লাসের বাংলা বই এর প্রশ্ন উত্তর এখানে পাবেন। টেক্সট বই text book থেকে সব উত্তর আছে । বাংলা সাহিত্য আলোচনা (Discussion of Bengali literature).
WBBSE Madhyamik Bengali Suggestion, WBBSE Class 10th Bengali Suggestion Download, WBBSE Class 10th Bengali Question Answer Suggestion, WBBSE Class 10th Bengali, WBBSE Class 10th Bengali Question Paper, WBBSE Madhyamik important question-answers, Madhyamik Bengali Suggestion.
AKB SCHOOL provides Madhyamik Bengali Suggestion, WBBSE Class 10th Bengali Question Answer Suggestion, WBBSE Class 10th Bengali Question Paper, WBBSE Madhyamik important question-answers, Madhyamik Bengali Suggestion.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam links in the comment box.