Footer Logo

২০২১/০৫/২২

চর্যাপদ প্রশ্নোত্তর Charyapada Details

  BAIRAGYA SHIKSHA NIKETAN       ২০২১/০৫/২২

 চর্যাপদ: আবিষ্কার, নামকরণ, ভাষা, কাল । চর্যাপদ প্রশ্নোত্তর । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ।


চর্যাপদ প্রশ্নোত্তর Charyapada Details
চর্যাপদ প্রশ্নোত্তর Charyapada Details


চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন (Who Discovered Charpada)

এশিয়াটিক সোসাইটির বিশিষ্ট কর্মকর্তা হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (Haraprasad Shastri) ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবারের পুঁথিশালা থেকে ‘চর্যাপদ’ গ্র্রন্থটি আবিষ্কার করেন । চর্যাপদের (Charyapada Poem) সাথেই তিনি নিয়ে এসেছিলেন ‘সরহপাদের দোঁহা’ ও ‘কৃষ্ণাচার্যের দোঁহা’ গ্রন্থদুটি ।

১৯১৬ সালে এই তিনটি গ্রন্থ ও ‘ডাকার্নব’ গ্রন্থটিকে সংযুক্ত করে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে নিজস্ব সম্পাদনায় একটি গ্রন্থ প্রকাশ করলেন। নাম দিলেন- ‘হাজার বছরের পুরান বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোঁহা’ বা ‘চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়’। ভূমিকায় চারটি গ্রন্থকে বাংলা ভাষায় লেখা দাবি করলেও কেবল চর্যাপদের (Charyapada Text) ভাষা ছিল বাংলা। অন্য তিনটির ভাষা সৌরসেনী অপভ্রংশ ।

চর্যাপদ কাকে বলে

চর্যাপদ-এর পুঁথি (Charyapada Script) লেখা হয়েছিল তালপাতায়,উভয় পৃষ্ঠাতে। প্রতি পৃষ্ঠায় পাঁচটি করে টানা লাইন আছে। পুঁথির শেষ পাতা ও মধ্যে কয়েকটি পাতা হারিয়ে গেছে(৩৫,৩৬,৩৭,৩৮,৬৬)। অপ্রাপ্ত পদের সংখ্যা সাড়ে তিনটি । গ্রন্থটিতে মোট পঞ্চাশটি পদ ছিল বলে জানা গেছে। কীর্তিচন্দ্র যে তিব্বতী অনুবাদটি করেছিলেন তাতে এই সাড়ে তিনটি পদের সন্ধান মিলেছে ।



চর্যাপদের রচনাকাল

 ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, দশম শতকের মধ্যভাগ থেকে দ্বাদশ শতকের ভিতর চর্যা গানগুলি লেখা হয়েছিল । এ বিষয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে ।মহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদ রচনার সূচনা সপ্তম শতকে। রাহুল সাংকৃত্যায়ন অষ্টম থেকে একাদশকে চিহ্নিত করেছেন। তবে এগুলি যে বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই।

 চর্যাপদের নামকরণ

চর্যার পুঁথির গ্রন্থনাম নিয়ে পন্ডিতমহলে মতভেদ আছে । আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নাম দিয়েছেন ‘চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়’,যদিও পুঁথির ভিতর এই নামটি উল্লেখ নাই । প্রবোধচন্দ্র বাগচী ‘চর্যাগীতিকোষবৃত্তি’ নাম যথার্থ মনে করেন। ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে গ্রন্থটির নাম ‘চর্যাগীতি’। পরবর্তীকালে নামের ছড়াছড়ি ঘটেছে। যেমন , ‘চর্য্যাচর্য্য’, ‘চর্যাগীতিকোষ’ , ‘আশ্চর্যচর্য্যাচয়’। আলোচনার স্বার্থে ‘চর্যাগীতি’ নামটিকে গ্রহণ করছি ।

চর্যাপদের পদকর্তা কতজন : চর্যাপদের পদকর্তাদের নাম (Who Wrote Charyapada)

 চর্যাগীতিতে উল্লেখিত ভনিতা বা মুনিদত্তের টিকা মিলিয়ে মোট ২৩জন পদকর্তার নাম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ভুসুকু পাদের নামে (৮টি), সরহপাদের (৪টি), কুক্কুরিপাদের (৩টি)  পদ পাওয়া গেছে। কবিরা সকলেই মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের যোগাচার শাখার অন্তর্ভুক্ত । তাঁরা সিদ্ধাচার্য নামে পরিচিত ছিলেন। মুনিদত্তের মতে, আদি সিদ্ধাচার্য লুইপাদ । এঁদের নাম গুলি সবই ছদ্মনাম ।

 চর্যাপদের ভাষা

 চর্যাগীতি বাংলা ভাষায় লেখা হলেও তাতে অবহট্টের ছাপ আছে। তাই কিছু পন্ডিত চর্যাগীতির ভাষাকে বাংলা বলতে চাননি। বিজয়চন্দ্র মজুমদার এর ভাষাকে হিন্দি বলতে চান। তবে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘ওডিবিএল’ গ্রন্থে চর্যার ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরন, ছন্দ ইত্যাদি বিচার করে প্রমাণ করলেন চর্যাগীতির ভাষা প্রাচীন বাংলা ভাষা ।সুকুমার সেন বলেছেন “হিন্দির দাবি উঠতেই পারে না”।

চর্যাপদের ভাষাকে সন্ধ্যা ভাষা বলা হয় কেন

চর্যার সাংকেতিক বচনের (Charyapada Meaning) নাম সন্ধ্যাভাষা । এর অর্থ সম্যক ধ্যানের দ্বারা যা বুঝতে হয় । চর্যার ভিতর একটি প্রচ্ছন্ন অর্থ আছে । সেই লুক্কায়িত তাৎপর্যই অভিপ্রায়িক বচন ।  শব্দের অর্থ বার্চ্যার্থ থেকে পৃথক । তবে সব গান সন্ধ্যা ভাষায় লেখা নয়। ২ ও ৩৩নম্বর চর্যা আদ্যোপান্ত সন্ধ্যা শব্দে লেখা ।আবার এমন পদ আছে যেখানে কোন সন্ধ্যাশব্দই নেই ।

চর্যাপদ কবিতা (Philosophy of Charyapada)

 বজ্রযান ও সহজযানের দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব নানা প্রতীক ও রূপকের দ্বারা চর্যাপদে বর্ণিত হয়েছে ।বাস্তব জীবনের দুঃখ কষ্টের চক্র পার হয়ে নির্বাণ লাভ করার নানা মত এখানে কবিরা লিপিবদ্ধ করেছেন ।চর্যাপদের সমাজজীবন, তত্ত্বদর্শন প্রাধান্য পেলেও পদগুলিতে কবিত্বের পরিচয় আছে। 


গ্রন্থঋণ- অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপধ্যায় ।

বাংলা সাহিত্য আলোচনা । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ।

logoblog

Thanks for reading চর্যাপদ প্রশ্নোত্তর Charyapada Details

Previous
« Prev Post

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam links in the comment box.